সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মেধা-তালিকা প্রকাশ করে বিতর্কে জড়াল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। উচ্চ মাধ্যমিকে সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মেধা-তালিকা প্রকাশ করার কী যুক্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা। মেধার বদলে কোনও বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
সংসদ-কর্তৃপক্ষের দাবি, মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের চাহিদা মেনেই এই তালিকা তৈরি হয়েছে। যদিও মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও সময়েই এই তালিকা চায়নি।
সংসদ সূত্রের খবর: গত বছর থেকে সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মেধা-তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল প্রকাশ করার সময় সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদ-সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের পাশের হারও আলাদা করে উল্লেখ করেন। সেই সময় তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য একটি পৃথক মেধা-তালিকাও তৈরি করেছে সংসদ। সংসদের তরফে সেই তালিকা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়াও হয়। কেন ওই তালিকা তৈরি করতে গেল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ?
সংসদ সূত্রের বক্তব্য: রাজ্য সরকারের নির্দেশেই তালিকা তৈরি হয়েছে। গত বারও ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সব দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
অন দিকে রাজ্যের প্রাক্তন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী সিপিএমের পার্থ দে সংসদের এই তালিকা তৈরির নীতিগত বিরোধিতা করে বলেন, “আমাদের সময়ে কখনও এমনটা হয়নি। আমি ধর্মের ভিত্তিতে এই বিভাজনকে সমর্থন করতে পারছি না।” একই মত সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য মইনুল হাসানের। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের জনসমাজে যে অসাম্প্রদায়িক
পরম্পরা রয়েছে, এই ধরনের তালিকা সেটাকে নষ্ট করে দেবে।” কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানও মনে করেন, “এ সব সরকারের গিমিক। এ ভাবে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এ ভাবে কোনও জনগোষ্ঠীর উন্নতি হয় না। উল্টে সংখ্যালঘুরা অন্য গোষ্ঠীর হিংসার পাত্র হন।”
রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদেরাও সরব হয়েছেন ওই পৃথক তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তে। পবিত্র সরকারের মন্তব্য, “এটা একটা নির্লজ্জ, রাজনৈতিক চাল। আলাদা করে মুসলিমদের নজর কাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে মেধাই আসল কথা, সেখানে কোনও গোষ্ঠীর জন্য আলাদা করে মেধা-তালিকা প্রকাশ করার যুক্তি দেখি না।” সুকান্ত চৌধুরী অবশ্য যে কোনও ধরনের মেধা-তালিকা তৈরিরই বিরোধী। তিনি বলেন, “কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য মেধা-তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তও আমি ভালো চোখে দেখছি না।” শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, “এটা দেশের মধ্যে আর একটা দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা।
এই বিভাজনের কোনও প্রয়োজনই ছিল না।”
তবে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত শতকরা একশো ভাগ সঠিক বলে সওয়াল করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর মন্তব্য, “আরও আগেই এ ধরনের তালিকা চালু হওয়া উচিত ছিল। সাচার কমিটির রিপোর্ট আমাদের জানিয়েছে, সারা দেশে এবং এ রাজ্যে মুসলিমরা পিছিয়ে রয়েছেন। এ ধরনের তালিকা থাকলে অগ্রগতির একটা হিসেব পাওয়া যায়। সেটা
পিছিয়ে থাকা মুসলিম পড়ুয়াদের অনুপ্রেরণাও যোগায়।” |