|
|
|
|
পরিদর্শন শিকেয়, স্কুলের সমস্যা দেখার কেউ নেই |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
শুধু কর্মী সঙ্কটই নয়, কাজও বেড়েছে অনেক। স্কুলে-স্কুলে গিয়ে পরিকাঠামোর খোঁজখবর নেওয়ার সময় আর হয় না পরিদর্শকদের। সে প্রাথমিকই হোক বা মাধ্যমিক। পরিদর্শকদের বক্তব্য, স্কুলের সংখ্যা বাড়লেও কর্মী সংখ্যা বাড়েনি। দফতরে বসে মিড-ডে মিলের হিসাবপত্র, খাতার কাজ সারতে-সারতে দিন কেটে যায়। বেরনোর সময় কোথায়?
কর্মী সঙ্কটের কথা মেনে নিলেও পরিদর্শন একেবারেই হয় না, এমনটা মানতে নারাজ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড়। তিনি বলেন, “পরিদর্শন হয় না বললে ভুল হবে। তবে, নিয়মিত হয়ে ওঠে না হয়তো।” জেলারই প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক উত্তম ত্রিপাঠী অবশ্য মেনে নেন, “পর্যাপ্ত স্কুল পরিদর্শক না থাকায় সমস্যা হয়। আমরা বিষয়টি শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের জানিয়েছি।”
স্কুলে গিয়ে সামগ্রিক পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ও সম্পর্ক, ক্লাসের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় শিক্ষার্থীর সক্রিয় যোগদান, বিভিন্ন মেধার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা হচ্ছে কি না ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব পরিদর্শকদের। এখন আবার শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে। সেখানে আবশ্যিক করা হয়েছে, প্রতি স্কুলে আলাদা ক্লাসঘর, ছাত্র অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক, খেলার মাঠ, লাইব্রেরি, পাঁচিল, শৌচাগার, ৬ থেকে ১৪ বছর শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক শিক্ষাদান-সহ নানা বিষয়। কিন্তু স্কুলে গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন না হওয়ায় এগুলো কার্যকরী হচ্ছে কি না দেখার কেউ নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কথা ধরা যাক। এই জেলায় প্রাথমিক স্কুল আছে ৪ হাজার ৬৮৪টি। চক্রের সংখ্যা ৬৯। প্রতিটি চক্রে একজন করে অবর স্কুল পরিদর্শক (এসআই) থাকার নিয়ম। কিন্তু ৬৯টি চক্রের জন্য পরিদর্শক রয়েছেন মাত্র ৪০ জন। ফলে একজনের উপর একাধিক চক্রের দায়িত্ব পড়ছে। এই অবস্থা এক-দু’বছর নয়, প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। আবার একটি চক্রের আওতায় ৫০টি স্কুল থাকার কথা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে স্কুলের সংখ্যা বাড়লেও চক্রের সংখ্যা না বাড়ায় প্রতি চক্রে কোথাও ৭০ আবার কোথাও ৮০-৯০টা স্কুল রয়েছে। এতগুলো স্কুলের কাগজপত্র সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় পরিদর্শকদের। মাধ্যমিক স্কুলের ক্ষেত্রে কাজ আরও বেশি। এতসব সামলে আর বেরনো সম্ভব হয় না। পরিদর্শনের জন্য কোনও গাড়িও নেই দফতরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল পরিদর্শকের কথায়, “জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই অবস্থা খুব খারাপ। একথা আমরা জানি। কিন্তু কী করব? একাধিক চক্রে করণিকও নেই। ফলে শিক্ষকদের বেতন থেকে করণিকের কাজ-সহ সর্বশিক্ষা মিশনের যাবতীয় হিসাব আমাদের দেখতে হয়। বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক, আদালতের কাজ থাকে। বেরলেই তো পুরো দিন নষ্ট।”
পরিদর্শন না হওয়ায় সমস্যা হয় স্কুলেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, “আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। একজন শিক্ষক অসুস্থ হলে বা না এলে একসঙ্গে দু’টি ক্লাস নিতে হয়। স্কুলে পাঁচিল, শৌচাগার নেই। পরিদর্শক এলে তিনি নিজের চোখে তা দেখতে পেতেন। আমরাও এই সব দাবি জানাতে পারতাম।” আর এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আট বছর আগে কাজে যোগ দিয়েছি। এত বছরেও কোনও পরিদর্শক এল না স্কুলে। এই ভাবেই চলছে।” |
|
|
|
|
|