দুই জেলার চার ‘তারকা’ উচ্চ মাধ্যমিকে
চ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে এ বার ‘তারকা’র ছড়াছড়ি দুই মেদিনীপুরে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রকাশিত প্রথম থেকে দশম স্থানাধিকারীর তালিকাতেই রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তিন ও পশ্চিম মেদিনীপুরের এক কৃতী।
কাঁথি মডেল ইনস্টিটিউশনের ইন্দ্রনীল নায়ক ৪৬৯ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম ও জেলার মধ্যে প্রথম। বাংলায় ৮৬, ইংরাজিতে ৯৩, ভৌতবিজ্ঞানে ৯০, রসায়নে ৯৭, অঙ্কে ১০০ ও জীববিজ্ঞানে ৯৩ পেয়েছেন তিনি। বাবা কাঁথির বিশিষ্ট চিকিৎসক অরবিন্দ নায়ক। ইন্দ্রনীলের দুই দিদিও মেডিক্যালে পড়ছেন। তবে ইন্দ্রনীল গবেষণা-পড়াশোনার মধ্যেই থাকতে চান। অবসর সময়ে খেলাধুলো আর গল্পের বই নয়তো কম্পিউটার গেমস। প্রিয় ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সহবাগ। ইন্দ্রনীলের ফলে উচ্ছ্বসিত স্কুলের প্রধানশিক্ষক সিদ্ধার্থশঙ্কর কর বলেন, “নম্র স্বভাবের ইন্দ্রনীল পড়াশুনা থেকে খেলাধুলো সবেতেই পারদর্শী। প্রতি বছর প্রথম হত। ও যে ভাল কিছু করবে, এমনটাই আশা করেছিলাম।”
কাঁথির ইন্দ্রনীল নায়ক। ভগবানপুরের ইন্দ্রজিৎ সাহু। ঘাটালের সাম্যদেব মাহাতো। কাঁথির সায়ন প্রামাণিক।
৪৬৭ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ইন্দ্রজিৎ সাহু। বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ময়নার চংরাচক জগদীশ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের এই কৃতী ছাত্রের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলটি প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায়। অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। ইন্দ্রজিতের পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখে আমরা ওর হস্টেল খরচ মকুব করে দিয়েছিলাম। আজ ওর সাফল্য দেখে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করছি।” তমলুক শহর থেকে ময়না-মেদিনীপুরগামী সড়কে অন্নপূর্ণা বাজার বাসস্টপে নেমে প্রায় তিন কিলোমিটার মোরাম রাস্তা পেরিয়ে চংরাচক জগদীশ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। সেখানে গিয়ে এ দিন দেখা যায় ইন্দ্রজিৎকে ঘিরে রয়েছেন শিক্ষক-সহপাঠীরা। ইন্দ্রজিৎ জানান, গবেষণা করে পড়াশোনার জগতেই থাকতে চান। নিয়ম করে প্রতি দিন ১২-১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন ইন্দ্রজিৎ। অবসর সময়ে গানশোনার পাশপাশি নিজে তবলা বাজানো শিখেছেন। ফলাফলে খুশি হলেও ছেলের উচ্চশিক্ষা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় বাবা জয়দেব সাহু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা স্বামী-স্ত্রী মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছি। ছেলে বরাবরই প্রথম হত। তাই ওর পড়াশোনায় যাতে কোনও অসুবিধা না-হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু উচ্চশিক্ষার খরচ অনেক বেশি। কতটা পারব জানি না।”
দু’বছর আগে মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে পঞ্চম হয়েছিলেন ঘাটালের কুশপাতার সাম্যদেব মাহাতো। ভাল ফল করার একটা চাপ ছিল নিজের মধ্যেই। সকাল দশটায় টিভিতে ‘ষষ্ঠ’ হওয়ার খবরটা শুনে মা অণিমাদেবীকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ কেঁদে ফেলেন তিনি। সাম্যদেব বলেন, “ভাল ফল হবে জানতাম। কিন্তু ষষ্ঠ হব, এটা আশা করিনি। তাই টিভিতে খবরটা শুনে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। মাকে জড়িয়ে হাইহাউ করে অনেকক্ষণ কেঁদেও ছিলাম।” পেশায় শিক্ষিকা অণিমাদেবী বলেন, “ছেলের রেজাল্টের জন্য আজ স্কুলে ছুটি নিয়েছিলাম। টিভিতে খবরটা শোনার পরও বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরেই দেখি বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের ভিড়। তখন নিশ্চিন্ত হয়ে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাই।” খবর পেয়েই নিজের স্কুল থেকে বাড়িতে চলে আসেন বাবা জয়দেব মাহাতো। তিনি বলেন, “ছেলের ইচ্ছে বায়ো-কেমিস্ট্রিতে গবেষণা করার। তাই এখন রসায়নে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে চাইছে ও। ছেলের ইচ্ছেই আমাদের ইচ্ছে।” খবর চাউর হতেই খুশির হাওয়া ঘাটাল বিদ্যাসাগর স্কুলে। কৃতী ছাত্রকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এসেছিলেন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল কর। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার আমার মেয়ের বিয়ে। খুব ব্যাস্ত। তা সত্ত্বেও খবরটা শুনে একবার সাম্যদেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য চলে এসেছি।” কাঁথি কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদনের সায়ন প্রামাণিক ৪৬৬ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে সপ্তম স্থানে রয়েছেন। ভাল ফলেরই আশা করেছিলেন সায়ন। কিন্তু রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার কথা বোধহয় ভাবতে পারেননি। বাবা আর মা-ই জীবনের অনুপ্রেরণা জানিয়ে এই ফলের কৃতিত্ব দেন তাঁদের। সাতমাইল হাইস্কুলের শিক্ষক বাবা তপন প্রামাণিক জানান, প্রতি দিন ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করত ছেলে। কোনও দিন পড়তে বসার জন্য বলতে হয়নি। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করার পরে গবেষণা করার ইচ্ছে আছে ‘মেসি’র ভক্ত সায়নের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.