‘অরুণ জেটলি এক জন মাস্টার ফিক্সার ছাড়া কিছুই নয়।’ ‘এই জয় চোরেদের জয়। কিন্তু প্রতিজ্ঞা করছি, বেশি দিন এদের টিকতে দেব না।’ ‘আসুন, এই ফিক্সারদের আমরা পচা ডিম দিয়ে অভ্যর্থনা জানাই। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের উচিত জেটলি-শুক্ল-ঠাকুরদের বাড়ি তাক করে পচা ডিম ছোড়া।’ ‘অরুণ জেটলির কোনও লাজলজ্জা নেই। ও নিজেই দেশের লজ্জা।’
সোমবার দুপুর থেকে রাত। একটা নয়, এক কথায় চরম আক্রমণাত্মক টুইটের স্রোত। স্রষ্টা ললিত মোদী। যিনি রবিবাসরীয় বৈঠক-উত্তর ভারতীয় ক্রিকেটের এক অভূতপূর্ব বিভাজনকে প্রকাশ্যে এনে ফেললেন। যাঁদের এককাট্টা হয়ে শ্রীনিবাসনের অপসারণে নামার কথা ছিল, তাঁরাই এখন দুটো ভাগে বিভক্ত। যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখেনি ভারতীয় ক্রিকেট। দেখেনি এ ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকাশ্যে চলে আসা।
দুই গোষ্ঠীর এক দিকে এখন শরদ পওয়ার, আইএস বিন্দ্রা, ললিত মোদী এবং শশাঙ্ক মনোহর। শ্রীনিবাসনের পরোক্ষ সমর্থনপুষ্ট অন্য গোষ্ঠীতে রয়েছেন অরুণ জেটলি এবং জগমোহন ডালমিয়া। এক দিকে ললিত মোদী যেমন টুইট করছেন, আইএস বিন্দ্রা যেমন নিজের ব্লগে রবিবারের বৈঠকের অবৈধতা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন, প্রশ্ন তুলছেন বোর্ডের কমিশন গঠন এবং অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট নিয়োগের বৈধতা নিয়ে, লিখছেন, “আমি সকাল ছ’টায় ফ্লাইট ধরে এই গরমে কেন যে চেন্নাই গেলাম, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। বৈঠকে বোর্ডের প্রচুর টাকা আর সদস্যদের সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হল না। যুগ্ম-সচিব ছাড়া আরও দুই রাজনৈতিক নেতা তো বৈঠকে আসার প্রয়োজনই মনে করেননি।” অন্য দিকে তখন ডালমিয়া গোষ্ঠী পাল্টা যুদ্ধের হুঙ্কার দিচ্ছে। স্বয়ং ডালমিয়া মোদী-কাণ্ড নিয়ে বিরক্ত। আর তাঁর গোষ্ঠীর বক্তব্য, সেপ্টেম্বরের নির্বাচনকে মাথায় রেখে যদি মোদী এ সব কথা বলেন তা হলে বিশেষ লাভ হবে না। দেশে ফিরে ময়দানে নেমে তার পর লড়ুক। |
অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন জেটলিকে এ ভাবে মোদীর আক্রমণ করা দেখে। মোদী এমনিতে বিজেপি ঘনিষ্ঠ। এখন সেই মোদীই কিনা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা জেটলিকে প্রকাশ্যে গালাগালি করছেন! বলা হচ্ছে, দুই শিবিরের আকচাআকচি কোন পর্যায়ে গিয়েছে, এতেই স্পষ্ট। সঙ্গে আরও বলা হচ্ছে, আসন্ন বোর্ড নির্বাচনে যদি ডালমিয়া দাঁড়িয়ে যান, তা হলে সেটা চূড়ান্ত আকর্ষণীয় হতে চলেছে। শ্রীনিবাসন যে আর ফিরতে পারবেন না, সেটা প্রায় ধরেই নিচ্ছে বোর্ডমহল। কেউ কেউ আবার সাগ্রহে তাকিয়ে আছেন গুরুনাথ-কাণ্ড নিয়ে মুম্বই হাইকোর্ট কী বলে, সেটা শোনার জন্য।
রাতে মোদীর বিস্ফোরক টুইট নিয়ে ডালমিয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে আনন্দবাজার-কে তিনি বললেন, “আমি মুখ খুললেই এ সব নিয়ে এখন ঝগড়াঝাঁটি বেঁধে যাবে। মোদী কী বলেছে না বলেছে সেই প্রসঙ্গে আমি ঢুকতে চাইছি না। এ সব নিয়ে ভাবতে গেলে কাজটা ঠিক করে করা যাবে না।” দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে তাঁকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যাবে কি না, সে সব অঙ্কেও ডালমিয়া ঢুকতে রাজি নন। এই প্রসঙ্গে উত্তর আসছে, “কাল কী হবে কেউ জানে না।” আপাতদৃষ্টিতে ডালমিয়ার প্রধান লক্ষ্য এখন বোর্ডের পক্ষ থেকে গুরুনাথ-কাণ্ডের নিষ্পত্তি করা। শ্রীনিবাসন নিযুক্ত তদন্ত কমিশন এখন যে বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে।
শনিবার পদত্যাগ করা বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালেকে ফেরানোর আর কোনও রাস্তা নেই। অন্তর্বর্তী বোর্ড প্রেসিডেন্টের অনুরোধ তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। বাকি আছেন অজয় শিরকে। ডালমিয়ার কথামতো যাঁর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। পদত্যাগ করা বোর্ড কোষাধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার মেয়াদ আরও চব্বিশ ঘণ্টা বাড়িয়েছেন ডালমিয়া। মঙ্গলবারও শিরকে যোগাযোগ না করলে তখন তদন্ত কমিশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যা জানা গেল, দুটো জিনিস হতে পারে। এক, শ্রীনিবাসনের কমিশন পুনর্গঠিত হল। যেখানে চেন্নাইয়ের এক জন বিচারপতি শুধু থাকলেন। অন্য বিচারপতি অন্য কোনও রাজ্য থেকে। তিন নম্বর সদস্য প্রাক্তন কোনও নামী ক্রিকেটার। আর সম্ভাবনা দুই, যা কমিশন আছে সেটাই থাকল। তিন নম্বর সদস্যের জায়গায় নিয়োগ করা হল কোনও সিবিআই অফিসারকে। অতীতের মাধবনের মতো।
এ দিন ক্লাব হাউসের সাংবাদিক সম্মেলনে ডালমিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়, কমিশনে দুই বিচারপতিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। জগমোহন ডালমিয়ার সেটা সামলানোর ক্ষমতা আছে? “ক্ষমতা আছে কি না, ঠিক জানি না। কিন্তু একটা কথা বলতে পারি, কোনও রাস্তাই বাদ দেব না।” ঠিক তেমনই প্রশ্ন উঠল, জাগদালে তো ফিরছেন না। তা হলে আর এক জন যুগ্ম-সচিব কে হবেন? শিরকে না ফিরলে কোষাধ্যক্ষই বা কে? ডালমিয়ার উত্তর, “কয়েকটা দিন সময় দিন। কোনও পদই ফাঁকা থাকবে না।” কিছু কিছু নাম অবশ্য এখনই ভাসছে। যেমন রঞ্জীব বিসওয়াল। যেমন বিশ্বরূপ দে।
সম্ভবত ৬ জুনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট’স অফিস পুরোপুরি ভাবে চলে আসছে চেন্নাই থেকে কলকাতায়। বোর্ড সিএও রত্নাকর শেঠি-সহ কয়েক জন কর্তাও আসছেন ডালমিয়াকে সাহায্য করতে। তবে আইসিসি-তে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব কে করবেন, সেটা নিয়ে খুব পরিষ্কার নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট।
খুব সম্ভবত তিনি নিজেই। আর তিনি না হলে কে যাবেন, সেটাও ঠিক করবেন জগমোহন ডালমিয়া!
|