সম্পাদকীয় ২...
অনাস্থা প্রস্তাব
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ামাত্র দক্ষিণ কলিকাতার একটি বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী এবং তাহাদের অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন পড়িয়াছিল। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হইবার লাইন। সেই বিদ্যালয়টি এক নূতন ব্যবস্থা করিয়াছিল মাধ্যমিকে যাহারা ৯০ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব নম্বর পাইয়াছে, তাহাদের জন্য ‘আগে আসিলে আগে সুযোগ’ ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা। আরও কয়েকটি বিদ্যালয়েও একই রকম দীর্ঘ লাইন পড়িয়াছিল। সেই বিদ্যালয়গুলিতে ‘তৎকাল ভর্তি’-র ব্যবস্থা ছিল না বটে, কিন্তু পূর্বোক্ত বিদ্যালয়টির সহিত বাকিগুলির মিল এই বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠনের ভাষা ইংরাজি। লক্ষণীয়, যাহারা এই বিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হইবার জন্য নাওয়াখাওয়া ভুলিয়াছে, তাহারা কেহই নব্বই শতাংশের নীচে নম্বর পায় নাই। অর্থাৎ, পরীক্ষার মাপকাঠিতে তাহারা সর্বোচ্চ মানের পড়ুয়া। যে বিদ্যালয় হইতে তাহারা মাধ্যমিকে এমন চমৎকার ফল করিল, সেই বিদ্যালয়েই তাহাদের অনীহা কেন? কেহ বলিতে পারেন, মাধ্যমিকের নম্বরে বিদ্যালয়ের অবদান যতখানি, গৃহশিক্ষকদের অবদান তাহার অনেক বেশি। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও তো গৃহশিক্ষক নিয়োগ করিতে বাধা নাই! বিদ্যালয় বদলাইবার সিদ্ধান্তটি, অতএব, একটি প্রকট অনাস্থা প্রস্তাব। রাজ্যের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা। বামফ্রন্ট-প্রবর্তিত এবং তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে সযত্নে লালিত মধ্যমেধার শিক্ষা-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অনাস্থা। এই অনাস্থাকে এখনই গুরুত্ব না দিলে আরও বিপদ অপেক্ষা করিয়া আছে।
ছাত্রছাত্রীরা যে গুটিকয় বিদ্যালয়ের দরজায় ভিড় করিয়াছে, স্পষ্টতই সেগুলি এই সংস্কৃতির ব্যতিক্রম। তাহাদের ব্যতিক্রমী থাকিতে হইয়াছে। ইংরাজিতে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা সেই ব্যতিক্রমের বড় অংশ। মেধাবী ছাত্ররা পশ্চিমবঙ্গের বদ্ধ জলাশয়ে থাকিতে চাহে না। তাহারা অধীর আগ্রহে এই রাজ্য ছাড়িবার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু সেইটুকুই নহে। এক্ষণে সর্বব্যাপী বিশ্বাস ইহাই যে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে লেখাপড়া হয় না। উচ্চ মাধ্যমিকই যেহেতু ভবিষ্যতের সিংহদরজা, এই স্তরে কেহ ঝুঁকি লইতে রাজি নহে। বিশ্বাসটি যে ভিত্তিহীন নহে, রাজ্যবাসীমাত্রেই জানেন। প্রশ্ন হইল, কর্তারা কী করিবেন? মাধ্যমিক বোর্ডের পঠনপাঠনের মান লইয়া প্রশ্ন নূতন নহে। এত দিন কর্তাদের ভাব ছিল, ‘না পোষাইলে রাস্তা দেখো’। সামান্য আর্থিক সক্ষমতা থাকিলেই যে মানুষ সেই রাস্তা দেখিয়া লইয়াছেন, অলিতে গলিতে গজাইয়া উঠা ইংরাজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলিই তাহার প্রমাণ। এই বার মনোভাব বদলানো প্রয়োজন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির আমূল সংস্কার জরুরি। শিক্ষকদের দায়িত্ববান করা, বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরাইয়া আনা যেমন প্রয়োজন, তেমনই চাই পাঠ্যক্রমের সংস্কারও। ইংরাজির ব্যবহার বাড়ানো অতি প্রয়োজন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হইতে পাশ করা ছেলেমেয়েরা যাহাতে সর্বভারতীয় স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষায় নাজেহাল না হয়, তাহা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.