সে দিন ভোরের আলো ভাল করে ফোটার আগেই রানওয়ে থেকে মুখ তুলে শহর ছেড়ে উড়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। তারিখটা ২৯ মার্চ, ২০০৯।
সেই শেষ। মাঝের এই চার বছরে একটি বারের জন্যও কলকাতায় ফিরে আসার কথা ভাবেনি তারা। দিল্লি-মুম্বই- বেঙ্গালুরু-চেন্নাইয়ে অবশ্য ব্রিটিশ উড়ান যথারীতি বহাল, এমনকী কলকাতা-ত্যাগের বিনিময়ে তাদের পরিষেবা জুটেছে হায়দরাবাদের কপালে। কলকাতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে এই চার বছরে যত বার প্রশ্ন করা হয়েছে, সংস্থার তরফে মিলেছে একই উত্তর “যে রুট আমাদের কাছে লাভজনক নয়, সেখানে এখনই আমরা বিমান চালাতে রাজি নই।”এবং সোমবারও রাজ্যের আহ্বানের উত্তরে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও সাড়া মিলল না ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
কলকাতা থেকে সরাসরি লন্ডন পর্যন্ত ব্রিটিশ উড়ানের সূচনা ১৯৩২-এ। সংস্থার নাম তখন বিওএসি। পরে বদলে হয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ১৯৮৫-তে তারা প্রথম বার কলকাতা-লন্ডন উড়ান গুটিয়ে নেয়। ফিরে আসে আট বছর বাদে, ১৯৯৩-এ। পশ্চিমবঙ্গে যখন বাম জমানা। কিন্তু তার পরে ষোলো বছর উড়ান চালিয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ সেই যে কলকাতাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল, আর তার মুখে ফেরানোর লক্ষণ নেই। ইতিমধ্যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সদরও কলকাতা থেকে সরে গিয়েছে দিল্লিতে।
প্রথমে ব্রিটিশ, পরে জার্মান বিমানসংস্থা লুফৎহানসা কলকাতা উড়ান উঠিয়ে দেওয়ায় এখন এ শহর থেকে লন্ডন বা ইউরোপের অন্যত্র সরাসরি বিমানযাত্রার সুযোগ নেই। এ দিকে কলকাতা বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল তৈরি হয়েছে। সরকারের দাবি, পর্যটনে প্রভূত উন্নতি করেছে রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে বিমানসংস্থাগুলোকে পশ্চিমবঙ্গে উড়ান চালাতে আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে সম্প্রতি মহাকরণে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে অন্যদের সঙ্গে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-লুফৎহানসা-কেএলএমের মতো শহরছাড়া বিদেশি বিমানসংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কোনও প্রতিনিধি আসেননি।
তবু রাজ্য হাল ছাড়তে রাজি নয়। শুধু উড়ান চালু নয়, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সদর দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতেও সরকার আগ্রহী বলে এ দিন দাবি করেছেন রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে। ফিরহাদের বক্তব্য: বাম আমলে জঙ্গি শ্রমিক-আন্দোলনের জেরেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কলকাতার সদর অফিস গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তৃণমূল সরকার যে এমন আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসেছে, সে বার্তা দিতেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সদর
কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন।
মন্ত্রীর কথা শুনে ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জয় ওয়াদবানি অবশ্য স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি শুধু জানান, রাজ্যের আবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, এ নিয়ে সমীক্ষাও চলছে। সদর স্থানান্তর প্রসঙ্গে বিমানসংস্থাটিও এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। কলকাতা থেকে ফের উড়ান চালুর বিষয়ে সংস্থার এক কর্তা বলেছেন, “প্রতি মুহূর্তে পর্যালোচনা চলছে। চেষ্টা হচ্ছে, বাণিজ্যিক দিক দিয়ে প্রতিটি রুট যাতে লাভজনক হয়।”
অর্থাৎ এই মূহূর্তে যে ব্রিটিশ এয়ারের কলকাতা উড়ান চালু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তা পরিষ্কার। তবে অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের কমিউনিটি ও স্থানীয় প্রশাসন (লোকাল গভর্ন্যান্স) সংক্রান্ত মন্ত্রী এরিক পিকলস বলেন, ভারতে পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিস্তর সুযোগ রয়েছে। আর তা করতে গেলে সবচেয়ে উপযুক্ত পথ ‘পিপিপি’ মডেল। রাজ্যে পর্যটন-শিক্ষা-স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রকল্পে এই মডেলে কাজ করতে তাঁরা আগ্রহী বলে ব্রিটিশ মন্ত্রী জানিয়েছেন। তাতে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন ফিরহাদও। |