সকলেই দৃষ্টিহীন। আলো, পাতা, ফুল,পাখি কোনও কিছুরই দৃশ্য-ধারণা নেই ওদের কাছে। তবু ওরাই পাতা, ফুল, পাখির ছবি আঁকার চেষ্টা করল ক্যানভাসে। রবিবার শিলিগুড়ির রামকিঙ্কর প্রদর্শনী কক্ষে চারজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর সঙ্গে ওদের আঁকা ছবি দেখতে ভিড় উপচে পড়ল। |
ছবি আঁকছে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
চা বাগানের ছায়া গাছের পাতায় হাত ছুঁইয়ে যশিন্তার আঙ্গুলে সবুজ রঙ মাখিয়ে দিয়েছিলেন চন্দ্রিমা গুহরায়। দু হাতে সেই রঙ মেখে সাদা ক্যানভাসে হাত ঘুরিয়ে পাতার ছবি একেছে ১৩ বছরের যশিন্তা। কিশোর নিরঞ্জনের দু হাতে নিজের আঙ্গুল ঘুরিয়ে ফুলের অবয়ব বুঝিয়ে দেন জয়দীপ ঘোষ। যশিন্তা আর নিরঞ্জন দুজনেই শিলিগুড়ির উপকন্ঠের একটি দৃষ্টিহীন আশ্রমের আবাসিক। কলকাতা এবং শিলিগুড়ি মিলিয়ে চার শিল্পী সম্প্রতি একটি কর্মশালায় ডেকে নেন দৃষ্টিহীন শিশু কিশোরদের। দু দিন ৬ জন শিশু কিশোরদের নিয়ে কর্মশালা করেন চন্দ্রিমা-জয়দীপরা। আঙ্গুলের ছোঁয়ায় ফুল, পাতা চিনিয়ে ছবি আঁকা শিখিয়েছেন ওদের।
রবিবার রামকিঙ্কর প্রদর্শনী কক্ষে সাদা আর কালো রেখায় আঁকা একটি ছবির পাশেই গাঢ় লাল আর হলুদ রঙের ফুলের সামনে দাড়িয়ে থাকতে হয়। ছবিতে রঙ এত বেশি কেন? কলকাতা থেকে আসা শিল্পী চন্দ্রিমা গুহ রায়ের কথায়, “যে ছবিটা একেছে তার রঙ সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই। ওরা হয়ত রঙ ছুুঁয়ে কিছু বুঝতে পারে। তবে ওদের ছবি আঁকা শেখাতে গিয়ে দেখেছি ওরা সব সমই গাঢ় রঙ করতে ভালবাসে। হয়ত ওদের চারপাশের জগৎ অন্ধকার বলেই গাঢ় রঙের প্রতি ওদের ঝোঁক বেশি।” যে আশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই আশ্রমের কর্ণধার অনন্ত রায় বলেন, “আবাসিকরা সকলেই কর্মশালায় খুব উৎসাহিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে খুবই ভাল।”
|