দু’চোখের কোনটিতেই দৃষ্টি নেই। সাধারণ স্কুলে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনা করেছে বরাবর। ব্রেইলে কোনও সহায়িকা বই পাওয়া না যাওয়ায় তাও পড়া হয়নি। এমনকি টেস্ট পেপারের নাম শুনলেও কোনও দিন তা সমাধান করার সুযোগ হয়নি। আরও ৫১জন দৃষ্টিহীনের সঙ্গে গাদাগাদি করে থেকে হাজারটা নিয়ম পালন করে তবেই পড়তে বসতে পেরেছে। তবু মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছে অভাবী পরিবারের সন্তান শুভঙ্কর মাহাতো। বিধাননগর সন্তোষিনী বিদ্যাচক্র হাইস্কুলের ছাত্র শুভঙ্করের প্রাপ্ত নম্বর ৪২৩। স্কুলের অনেক ছাত্রই অনুত্তীণর্। সেখানে তার এই কৃতিত্ব তারিফযোগ্য বলে মনে করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসীম দাস। অসীমবাবু বলেন,“শুভঙ্কর আমাদের স্কুলের গর্ব।” |
ভবিষ্যতে আইনজীবী হতে চায় সে। শুভঙ্কর জানায়,“দেশে অনেকেই ন্যায় বিচার পায়না অর্থের অভাবে। তাদের জন্যই আইনজীবী হয়ে বিনামূল্যে বিচার দেওয়ার লক্ষ্যে পড়াশোনা করতে চাই।” তার প্রিয় বিষয় ইতিহাসই, জানিয়েছে শুভঙ্কর। ইতিহাসের কাহিনী তাকে স্মৃতিমেদুর করে তোলে। তাছাড়া তখনকার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আপাতত কলা বিভাগে ভর্তি হবে বলে মনস্থির করেছে। তাকে সাহায্য করছেন স্কুলের সমস্ত শিক্ষকরাই। তবু পড়ার খরচের জন্য ফের কোথায় হাত পাতবেন তা নিয়েই চিন্তায় শুভঙ্করের স্থানীয় অভিভাবক আশিস দাস, অনন্ত রায়, অখিল বর্মন ও শুভাশিস চক্রবর্তী। এদের কাছেই থাকে শুভঙ্কর। তাদেরই মধ্যে এক শিক্ষক নিজেও দৃষ্টিহীন অনন্ত রায় বললেন, “শুভঙ্করের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তীব্র। তাই ভয় হয় যদি খরচ জোগাতে না পারি।”
শুভঙ্কর জন্ম থেকেই দু’চোখেই দেখতে পায় না। বাবা সামান্য ভাগচাষি নরেশ মাহাতো ছেলেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তার পক্ষে আর পড়ানো সম্ভব নয়। তার বদলে কাজে লেগে পড়লে পরিবারটা বাঁচে। দাদা দীপঙ্কর বাবার কথা মেনে নিলেও ছোট শুভঙ্কর মেনে নিতে পারেনি। বালুরঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম আলিপুর ছেড়ে চলে এসেছিল শিলিগুড়ির বিধাননগরের ভীমভার স্নেহাশ্রম দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ের খোঁজ পেয়ে আট বছর আগে। তখন রাগারাগি করলেও এখন অবশ্য খুশি নরেশবাবু। ফোনেই জানালেন তার খুশির কথা। এমনকি “গরমের ছুটিতে বাড়ি আসলে ছেলেকে কিছু উপহারও দিতে চাই” বললেন আপ্লুত বাবা।
|