জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদে প্রায় সব নতুন মুখই আনছে বামফ্রন্ট।
গ্রাম স্তর থেকেই চেয়ে পাঠানো হয়েছিল জেলা পরিষদের প্রার্থীদের তালিকা। তাতে ঠাঁই হয়নি বলে ওই জেলা পরিষদের বর্তমান ৩০ জন সদস্যকে এ বার আর টিকিট দেওয়া হল না। গত বার এই জেলা পরিষদের মোট আসন ছিল ৩৪টি। তার মধ্যে বামফ্রন্টের হাতে ছিল ৩২টি। এ বার আসন বেড়ে হয়েছে ৩৭টি। প্রার্থীদের মধ্যে কিন্তু দু’জন মাত্র পুরনো মুখ।
জলপাইগুড়িতে এ বারই প্রথম জেলা পরিষদ স্তরে বাম ঐক্য হওয়াতে বামফ্রন্টগত ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। জেলা পরিষদের বর্তমান সভাধিপতি, সহ সভাধিপতি সহ ৮ জন কর্মাধক্ষ্যকে প্রার্থী করা হয়নি। গত নির্বাচনে জলপাইগুড়ি সদর কেন্দ্রের জয়ী তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সুবীর রায় এবং আরএসপির তরুণ সদস্য রামকুমার লামাকে কেবল এ বারের প্রার্থী তালিকাতেও রাখা হয়েছে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের জোট হয়নি এই জেলায়। সে বার সিপিএম ৩১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। জিতেছিল ২৮টিতে। এ বার সিপিএম ২৮টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে। আরএসপি দিয়েছে ৮টিতে। ফরওয়ার্ড ব্লক দিয়েছে ১টিতে। তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রেই অপেক্ষাকৃত কমবয়সীদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আরএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী কাউকে তাঁদের তালিকায় রাখা হয়নি। ফব-র প্রার্থীর বয়সও ৪৫-এর কাছাকাছি। সিপিএমও জোর দিয়েছে তুলনামুলক ভাবে কম বয়সের প্রার্থীদের উপরে।
তবে বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার অভিযোগ এসেছিল। কিছু প্রার্থীর জীবনযাপন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সে কারণেই গ্রাম স্তর থেকেই প্রার্থী তালিকা
চেয়ে পাঠানো হয়। তবে গতবারের নির্বাচনে কিছু জয়ী প্রার্থীর আসন মহিলা এবং তফসিলি সংরক্ষণের আওতায় পড়ে যাওয়ায় তাঁদের আর প্রার্থী করা যায়নি।
জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “বর্তমান সদস্যদের বাদ দেওয়া বা নতুন মুখ আনা, এ ভাবে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা
করা যাবে না। পার্টির বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করেই প্রার্থী তালিকা স্থির করা হয়েছে। মানুষের মতামতও বোঝার চেষ্টা হয়েছে। গ্রহণযোগ্যদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে। শরিক দলের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আলোচনাতেই অনেকে নতুন নাম উঠে এসেছে, আবার অনেক নাম বাদ গিয়েছে।” ফব-র জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহাও বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে। দল চেয়েছে বলেই নতুন মুখকে প্রার্থী করা হয়েছে।”
প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের দীপ্তি দত্ত। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দফায় জিতেছেন বলেই দীপ্তিদেবীকে দলের নিয়ম মেনেই আর প্রার্থী করা হয়নি।
রবিবার নদিয়াতেও বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষ্ণনগরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে জানিয়েছেন, অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন কোনও ব্যক্তিকে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করবে না সিপিএম। সুমিতবাবু বলেন, “বহু যুবকই সাংসারিক চাপে অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছিলেন। তাঁদের স্বার্থ আমাদের দেখতে
হবে। তবে আমরা ঠিক করেছি এই অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত আমরা কাউকে প্রার্থী করব না।’’ এ দিন বামফ্রন্টের জেলা নেতৃত্ব যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থী ঘোষণা করে।
নদিয়াতেও ফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ ৭০ শতাংশ। তার মধ্যে ৫০ শতাংশই হচ্ছে নতুন প্রজন্মের।
মহিলা প্রার্থীর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে জেলা পরিষদে সংরক্ষিত আসনের থেকেও একটি বেশি আসনে মহিলা প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। ২০০৩ ও ২০০৮ সালের পর এ বারই এই জেলায় সার্বিক জোট হচ্ছে বলে বামফ্রন্টের দাবি। সুমিতবাবু বলেন, ‘‘এ বার একশো শতাংশ আসনেই ঐক্য হয়েছে।” মুর্শিদাবাদেও ফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় ৫২ জনের মধ্যে ৪৮ জনই নতুন মুখ। |