চলে গেলেন সিরাজের স্ত্রী
০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। তার ৯ মাসের মধ্যেই চলে গেলেন স্ত্রী হাসনে আরা সিরাজ। রবিবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
সিরাজ তখন আলকাপের ‘সিরাজ মাস্টার’। ছ’বছর আলকাপ দলের সঙ্গে ভবঘুরে জীবন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। সিরাজ লিখেছেন, “১৯৫৬ সালের জুন মাসে বাড়ি ফিরে এলাম। ঈষৎ পূর্বরাগ এবং হঠাৎ শ্রীমতী হাসনে আরা নামে এক ষোড়শীকে বিয়ে। খুবই দ্রুত। বিয়ের আগে চিঠি-চাপাটিতে তাঁকে জানাবার প্রাণপণ চেষ্টা ছিলআমি আসলে সাহিত্যিক। ঘরে এসে সে প্রমাণ দাবি করে বসল। দু’বছর কেটে গেল প্রমাণ দিতে। লিখে ফেললাম বড়সড় একটা উপন্যাস। তখন তা অপ্রকাশিত পড়ে রইল। কিন্তু সাহস পেলাম। যা অনেক পরে কিংবদন্তীর নায়ক নামে বের হয়। দেখলাম গদ্য লেখার ধৈর্য্য এসেছে। প্রথম গল্প কাঁচি, ইবলিস ছদ্ম নামে বের হয়। দ্বিতীয় গল্প ছদ্মনামে লিখলাম ভূচর।”
নিয়মিত কবিতা চর্চা ছিল। কিন্তু স্ত্রী হাসনে আরা সিরাজের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে কবিতার পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস লেখাও শুরু করেন তিনি।
দু’জনে। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে গৃহীত।
মৃত্যুর পরে সিরাজ প্রসঙ্গে হাসনে আরা সিরাজ লেখেন, “খুব জাঁকজমক করে হয়েছিল আমাদের বৌভাত। আমার শ্বশুরমশাই বিয়ের পরে আমাকে বলেছিলেন, ‘মা, তোমার উপরে আমার ছেলের দায়িত্ব দিলাম। ওকে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করবে। ও যেন আর গান-বাজনা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে না যায়। চাকরি করে সুখে ঘর-সংসার করুক।” আমি শ্বশুরমশাইয়ের কথা রেখেছিলাম। ওর ঘরে ছিল প্রচুর গল্প আর কবিতার খাতা। আমি বললাম, তুমি সাহিত্যিক হবে। তাহলে গান-থিয়েটার ছেড়ে লেখায় মন দাও। গল্প লেখো। ছোট গল্প। সে বাধ্য ছেলের মত আমার কথা শুনত। তখন সাহিত্য ছাড়া আমাদের মধ্যে কোনও কথা হত না। দিন-রাত সময় পেলেই গল্প লিখত। দায়িত্বশীল পিতা ও স্বামী হিসেবে সিরাজ ছিল অতুলনীয়।’
হাসনে আরা সিরাজের দেওর কবি সৈয়দ খালেদ নৌমান বলেন, “দাদা-বৌদির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ছিল। ছিল মানসিক বন্ধন। ফলে দাদার প্রয়াণ বৌদি কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। সিরাজহীন জীবনে বেঁচে থাকার আগ্রহটাই তাঁর চলে গিয়েছিল। ফলে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন। সেখান থেকেই শরীর ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন রোগ তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে। বৌদিকে বেসরকারি এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে আসেন। ফের বুকে সংক্রমণ নিয়ে তিন সপ্তাহ আগে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এবার আর তাঁকে ফেরানো গেল না।”
১৯৪০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরে জন্ম হাসনে আরা সিরাজের। যদিও তাঁর পৈতৃক ভিটে গোকর্ণে। শৈশব থেকেই হাসনে আরা সিরাজের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক ছিল। বিয়ের পরে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সান্নিধ্য তাঁকে কবিতাচর্চার দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাঁর লেখা কবিতা সেই সময়ের দৈনিক পত্রিকা স্বাধীনতা’র ছোটদের বিভাগে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যুগান্তর পত্রিকায় ‘হাসুনহেনা’ নামে ফিচার লিখতেন। ‘অমৃত’ পত্রিকা-সহ কলকাতার বেশ কিছু নামী পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কবিতাও লিখতেন। এছাড়াও কলকাতার এক নামী সংবাদপত্রে মেয়েদের বিভাগে নিয়মিত কলম লিখতেন। ‘লাল শিমূলের দিন’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
হাসনে আরা সিরাজের মৃত্যুর খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে ফোন করেন। মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তা পাঠান। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে মরদেহে মালা দেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। বাড়িতে যান সিপিএমের মহম্মদ সেলিমও। এদিন তাঁর মরদেহ পিস হেভেনে রাখা থাকবে। সরকারি মর্যাদায় সোমবার দেহ নিয়ে আসা হবে খোশবাসপুরে। মুস্তাফা সিরাজের পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.