হাওড়া উপনির্বাচন
ভোটের হার কমায় সংশয় সব শিবিরেই
ব রাজনৈতিক দলেরই নজর আপাতত যে উপনির্বাচনের দিকে, তার ভোটের হার উৎকণ্ঠায় রাখল সব পক্ষকেই! রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৬.২০%। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “সন্ধ্যা ৬টা অবধি অনেক জায়গায় ভোটারদের লাইন ছিল। তাঁদের ভোট দেওয়া না অবধি ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে।” এমনিতেই হাওড়ায় এ বার ভোটদানের সময়সীমা দু’ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন সূত্রেই খবর, শেষ পর্যন্ত ভোটদানের হার ৬৮%-এ পৌঁছতে পারে। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে অবশ্য ভোটের হার এর চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি ছিল। লোকসভা নির্বাচনে ২০০৯-এ ওই হার ছিল ৭৪.৪৭% এবং ২০১১-র বিধানসভা ভোটে ৭৭.৭৪%।
ভাঙচুরের পর লিলুয়ার বামফ্রন্টের দলীয় কার্যালয়। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক ভাবে ভোটের হারের প্রবণতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস যুযুধান তিন শিবিরই যথেষ্ট সংশয়ে। তৃণমূল ভবন থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দিনভর হাওড়ায় ভোটে নজরদারি চালাচ্ছিলেন। সকালের দিকে ভোটের হার আশানুরূপ নয় দেখেই দলের নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ দিয়ে তৃণমূলের কর্মীদের বাড়তি তৎপর হতে বলা হয়, যাতে তাঁরা মানুষকে বুথে আসতে উৎসাহিত করেন। রাতে শাসক দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “ভোটের হার দেখেই চূড়ান্ত কিছু তো বলা যায় না। একটা পর্যবেক্ষণ করা যায়। তাতে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, আমরাই জিতব। কিন্তু জয়ের ব্যবধান প্রত্যাশিত না-ও হতে পারে।”
পানিয়াড়া শিশুবোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে লাইন।
দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেসও ভোটের হার দেখে নির্দিষ্ট কোনও প্রবণতা বুঝতে পারছে না। দু’দলেরই মুল অভিযোগ, উত্তর হাওড়া ও বালির বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়েছে। বিরোধীদের এজেন্টদের বেশ কিছু বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। লিলুয়ায় তাদের একটি দলীয় কার্যালয়ে হামলা হয়েছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, “অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। সিপিএম বালিতে তাদের পার্টি অফিস ভাঙচুরের যে অভিযোগ তুলেছে, তা মিথ্যা। এ রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি! শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য মানুষকে অভিনন্দন।”
নির্বাচন কমিশনের কাছে তালিকা পাঠিয়ে রাতে সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছেন, ৮৩টি বুথে সুষ্ঠু ভোট হয়নি। তার মধ্যে ৭৫টিই উত্তর হাওড়া ও বালি এলাকার। কিন্তু উল্লেখযোগ্য হল, সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেও সিপিএম বা কংগ্রেস কেউই কিন্তু রাত পর্যন্ত কোথাও পুনর্নির্বাচন চায়নি! তাদের বক্তব্য, কিছু মানুষ তো ঠিকমতো ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ যতটা ভোট পড়েছে, তা কোন দিকে যেতে পারে, সেই ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নয়!
ভোটের সময়ে সংঘর্ষ। ঘুসুড়ির ভোটবাগানে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
সচরাচর উপনির্বাচনে সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে কম ভোট পড়াই দস্তুর। সাড়ে তিন মাস আগে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অবশ্য গড়ে ৭৫%-এর বেশি ভোট পড়েছিল। তাতেও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের যুক্তি, গ্রামীণ এলাকায় শহরের চেয়ে ভোটদানের হার বেশি হয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যেরও মত, “উপনির্বাচনে ভোটের হার কমই হয়। ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রে যা হয়েছিল, সেটাকে ব্যতিক্রমই ধরতে হবে। ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র বা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোটের হার যেমন সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে কম ছিল, হাওড়াতেও তা-ই। এর থেকে কিছু সিদ্ধান্তে আসা যায় না।” আগের ওই উপনির্বাচনগুলিতে সার্বিক ভাবে ভোটের হার কম হলেও বড় ব্যবধানে হেরেছিল সিপিএম। তাই এ বার আগে থেকে বিশেষ আশাবাদী হচ্ছে না তারা।
আবার তৃণমূল শিবিরের ভাবনা ভিন্ন। শাসক দলের একাংশের যুক্তি, ২০০৯ সাল থেকেই লাগাতার বিভিন্ন ভোটে বাম-মনোভাবাপন্ন একটি বড় অংশের মানুষ বামেদের প্রতি বিরূপ হয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু গত দু’বছরে তৃণমূল সরকারে থাকায় তাঁদের একাংশের মধ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাব জন্ম নিয়েছে। অথচ তাঁরা আবার রাতারাতি বাম শিবিরে ফিরে যেতে পারছে না। এমতাবস্থায় তাঁরা দোলাচলে আছেন এবং কাউকেই ভোট দিতে খুব উৎসাহিত বোধ করছেন না। এই অংশের মানুষ যে হেতু আগেই বাম শিবির থেকে তাঁদের দিকে এসেছিলেন, তাই এখন ওই ভোটাররা ভোটে বিরত থাকলে তাতে তাঁদেরই ক্ষতি হতে পারে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “বিরোধীরা যখন এত অভিযোগ করছে, তাতেই তো বোঝা যাচ্ছে আমাদের জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই! ব্যবধানটা কী হবে, সেটাই দেখার।”
বিরোধীদের অভিযোগ, পুরোপুরি সুষ্ঠু ভোট হাওড়ায় হয়নি। হাওড়ার প্রার্থী তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপবাবুর বক্তব্য, “উপনির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস চলছিল। তবু মানুষ সকাল থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ভোট শুরু হওয়ার পর বাম সমর্থক এবং সাধারণ ভোটারদের বিভিন্ন ভাবে আটকানো, ভয় দেখানো শুরু করে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিশেষ করে, বালি এবং উত্তর হাওড়ায় পোলিং এজেন্টদের তুলে দিয়ে বুথ দখল করে এক তরফা ভাবে ছাপ্পা দেয় তারা।” বিকালে লিলুয়ায় লোকাল পার্টি অফিসে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঢুকে প্রাক্তন সিপিএমের বিধায়ক কণিকা গঙ্গোপাধ্যায়কে হেনস্থা এবং পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে বলেও শ্রীদীপবাবুর অভিযোগ।
একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “তৃণমূল মোটরবাইক নিয়ে বুথের পাশে ঘুরেছে। বুথ দখল, আমাদের এজেন্টদের মারধর করেছে। বুথে মাইক্রো অবজার্ভাররা ছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্যের পুলিশ ছিল। তা সত্ত্বেও কেন ওদের গ্রেফতার করা হল না?” তাঁর আরও দাবি, “যেন তেন প্রকারে সব অসাধু কৌশল গ্রহণ করেছে তৃণমূল। তবে অশান্তির মধ্যেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ।” নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে কংগ্রেসের অভিযোগ।
তবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীলবাবু বলেন, “বুথ দখল, ভোট বয়কট এবং বড় ধরনের কোনও গোলমালের খবর মেলেনি। গোলমালের আশঙ্কায় ভোটপর্ব শুরুর আগে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ভোটপর্ব চলার মধ্যে কাউকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি। কোনও হিংসাত্মক ঘটনারও খবর নেই।” তবে তিনি জানান, সারা দিনে মোট ৩১টি অভিযোগ কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগ এসেছে বালি, উত্তর হাওড়া এবং মধ্য হাওড়া থেকে। ৫টি জায়গায় পোলিং অফিসারকে কেন্দ্র করে কিছু সমস্যা তৈরি হওয়ায় তাঁদের পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। হাওড়ায় ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি নজরদারি সফল ভাবে হয়েছে বলেও দাবি সুনীলবাবুর।
বিরোধীদের প্রতি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়ের কটাক্ষ, “সিপিএম হারের ভয়ে অপপ্রচার করছে!” বালি এলাকার অভিযোগের জবাবে আর এক মন্ত্রী, তৃণমূলের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বিরোধী দলগুলির লোকবল নেই, কর্মীরাও দূরে সরে গিয়েছে। তাই ওরা আমাদের নামে কুৎসা করছে! সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি যৌথ ভাবে আমাদের রাজনৈতিক আক্রমণ করার পরেও তারা যে কতটা দেউলিয়া, তা প্রকাশ পাবে ভোটের ফল বেরোলেই!
ভোট-বাক্সে কী আছে, জানা যাবে বুধবার!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.