ফি বছর গ্রাম ঘুরে বাবার সঙ্গে কাঁসর বাজায় সে। সাহায্য করে চাষের কাজেও। এই সব করে বেড়িয়ে পড়াশোনায় আর মন দেয় না, শিক্ষকদের কাছে এমনই অভিযোগ করতেন পরিতোষ দাসের বাড়ির লোকজন। মাধ্যমিকের ফল যদিও বাড়ির লোকজনের অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করেছে। মঙ্গলকোটের শিমুলিয়া গ্রামের পরিতোষ পেয়েছে প্রায়
|
পরিতোষ দাস।
—নিজস্ব চিত্র। |
৯১ শতাংশ নম্বর। তার বাবা মঙ্গল দাস বলেন, “দিনমজুরি থেকে ঢোল বাজানো, যখন যা কাজ পেয়েছি, তা করেই সংসার চালিয়েছি। এখন কী ভাবে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াব, তা ভেবেই রাতের ঘুম গিয়েছে।”
মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র পরিতোষ এ বার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৩৮। তবে তার দাবি, “পরীক্ষার আগে হাতে চোট না পেলে ফল আরও ভাল হতো।”
সব সময় বই মুখে বসে থাকা ছেলে অবশ্য সে ছিল না। ছাগল চরানো থেকে খেতে ধান রোয়া, সবই করেছে সে। মঙ্গলবাবু বলেন, “সামান্য জমিতে ভাগ চাষ করি। এ ছাড়া কয়েকটি ছাগল রয়েছে। বড় ছেলে পরিমল গত বছর মাধ্যমিক পাশ করে কাজের সন্ধানে চেন্নাই গিয়েছে। একা তো সব সামলাতে পারি না। তাই পরিমল সাহায্য করত।” পরিতোষের বাড়ির লোকজন জানান, বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার হলেও এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। বাড়িতে দেড়-দু’ঘণ্টার বেশি পড়া হত না পরিতোষের। সে বলে, “শিক্ষকেরা বই, খাতা দেওয়া-সহ নানা ভাবে সাহায্য করায় এই ফল করতে পেরেছি।” তার শিক্ষক অরিজিৎ দেবনাথ, শেখ মহম্মদ আলমেরা বলেন, “প্রতি দিন বাড়ির নানা কাজ সামলেও পরিতোষ পঞ্চম শ্রেণি থেকে স্কুলে প্রথম।”
পরিতোষ চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। তবে সে বলে, “বাড়ির যা অবস্থা কিছু ভাবা কি সম্ভব!” মঙ্গলবাবু বলেন, “এই পরিবেশে বড় হয়ে এই ফল করেছে-এটা বড় ব্যাপার। ভবিষ্যতে কী হবে ঈশ্বরই জানেন!” |