শনিবার এজবাস্টনে বিরাট কোহলি ও দীনেশ কার্তিকের ব্যাটে ওঠা ঝড়ে একটা কথা পরিষ্কার, ক্রিকেট নিয়ে যতই তোলপাড় হোক দেশ, ওদের সে সব ছুঁতে পারেনি। কেলেঙ্কারির ভূত ওদের ঘাড়ে চেপে বসতে পারেনি। এখনকার ক্রিকেটাররা যে কতটা পেশাদার, এর চেয়ে তার বড় প্রমাণ আর কিছুই হতে পারে না। তাই প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও আইপিএল কেলেঙ্কারির মধ্যে ধোনিদের জয়টার আলাদা তাৎপর্য থাকছে।
কিন্তু একটা অন্য বিস্ময় রয়েই যাচ্ছে। দুই ইনিংস মিলিয়ে সাড়ে ছ’শোর উপর রান! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হয়ে গেলে এমন উইকেটই পাবে তো ভারত? পেলে কিন্তু ধোনির দলের ব্যাটসম্যানদের আটকানো কঠিন।
কিন্তু এই রানের ফোয়ারার মধ্যেও ধোনির চিন্তা দূর হল কি? ম্যাচের পর অবশ্য ওকে টিভিতে বলতে শুনলাম, ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সে ও দারুণ খুশি। জেতার অভ্যাসটা তৈরি করাই আসল কথা। কিন্তু ইংল্যান্ডে পৌঁছে যে ভারত অধিনায়ক বলেছিল, প্রস্তুতি ম্যাচে ওর দলের পেস বোলারদের আবহাওয়া ও উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই প্রধান কাজ। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে সেই উদ্দেশ্য সফল হল বলে কিন্তু মনে হচ্ছে না। একেই পাটা উইকেট। তার উপর একেবারে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া। যেন এজবাস্টন নয়, ওয়াংখেড়েতেই খেলছে ধোনিরা। আসল জায়গায় ওরা এমন পরিবেশ পেলে হয়। |
বিরাট সেঞ্চুরির পথে কোহলি। ছবি: এপি |
জানি না, এটা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চাল কি না। ইংল্যান্ড দলের ভারত সফরের শুরুতে যেমন অ্যালিস্টার কুকদের ভারতের ‘টিপিক্যাল স্লো টার্নার’ দেওয়া হয়নি, তেমন শনিবারের ম্যাচেও দু’টো উপমহাদেশীয় দলকে তাদেরই হোম-উইকেট দিয়ে জব্দ করা হল কি না, কে জানে? কিন্তু প্রকৃতিও যে ইসিবি কর্তাদের পাশে, সেটা আর কে ভেবেছিল?
গত কয়েক দিন ধরে তুমুল বৃষ্টি আর স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার পর শনিবারই একেবারে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া। টস জিতে প্রথমে ধোনির ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণটা হল বোলারদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দেওয়া। কিন্তু উদ্দেশ্যসাধন হল কোথায়? ইরফান, ইশান্ত, ভুবনেশ্বর কুমাররা তুমুল মার খেল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের হাতে। কেউই কম রান দেয়নি। ইরফান তো নয়ের ইকনমি রেটে রান বিলিয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার ৫০ ওভারে ৩৩৩ রান তোলাটা আমার কাছে খুব একটা অস্বাভাবিক লাগেনি। এই উইকেটে এমনই ব্যাটিং হওয়া উচিত।
আবার বিরাট কোহলির বিগ সেঞ্চুরি (১২০ বলে ১৪৪) আর দীনেশ কার্তিকের ৮১ বলে অপরাজিত ১০৬-এর দাপটে বোঝা গেল, ভারতের মিডল অর্ডারও বেশ তৈরি হয়েই আছে। কিন্তু দুই ওপেনার শিখর ধবন ও মুরলী বিজয়ের রান না পাওয়াটা চিন্তার বিষয়। দুই ওপেনার যদি ইনিংসের ভিত ঠিক মতো তৈরি করতে না পারে, তা হলে তো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা আসল যুদ্ধে বেশ চাপে পড়ে যাবে। সাদামাঠা বোলিংয়ের পাশাপাশি ওপেনিংই আপাতত ধোনির ভাবনার বিষয়।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে ৩৩৩-৩ (পেরেরা ৮২, দিলশান ৮৪)
ভারত ৪৯ ওভারে ৩৩৭-৫ (কোহলি ১৪৪, কার্তিক ১০৬ ন.আ.) |