বন্ধ হয়ে গেল বিদেশি বিনিয়োগে তৈরি রাজ্যের প্রথম টেলিকম যন্ত্রপাতি তৈরির প্রকল্প নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই অবশ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সংস্থার ভবিষ্যৎ। গত দু’বছর ধরে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। ২০১২-র মে মাসে কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পও ঘোষণা করা হয়। ৬৫ জন কর্মীর মধ্যে ৬ জন ভারতে সংস্থার অন্য কারখানায় বদলি নিয়ে নেন। ১১ জন স্বেচ্ছাবসর নেন। গত শুক্রবার বাকি ৪৮ জনকে সংস্থা গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে চালু থাকছে ভারতেই তাদের অন্যান্য কারখানা।
সল্টলেক সেক্টর ফাইভের কারখানায় মূলত ল্যান্ডলাইন টেলিফোন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি তৈরি ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হত। সংস্থার অন্যতম কর্তা সতীন্দ্র সিংহ জানান, সংস্থার বর্তমান ব্যবসায়িক কৌশল অনুযায়ী মোবাইল ফোনের যন্ত্রপাতি তৈরির দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। তাই তাতে সল্টলেকের এই কারখানার জায়গা নেই। তবে কারখানার ১১ একর জমির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি সিংহ। কারণ জমির মালিকানা এখনও সিমেন্স-এর হাতে। নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক জমি লিজ নিয়েছিল। সংস্থা সূত্রের খবর, সেই লিজের মেয়াদ চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে।
২০১১-র শেষে সংস্থা জানিয়ে দেয়, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিশ্ব জুড়ে ধাপে ধাপে ১৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতও। সংস্থার সার্বিক হালও প্রতি বছর খারাপ হয়েছে। কমেছে মুনাফা। এর আগে নোকিয়া ও সিমেন্স, দু’সংস্থাই জানিয়েছে, নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্কে নতুন করে টাকা ঢালবে না তারা। চেন্নাই কারখানায় বরাতের অভাব ঘটেনি, কারণ সেখানে মোবাইলের যন্ত্রপাতি তৈরি হয়। সংস্থা সূত্রের খবর, সল্টলেক কারখানায় বরাত প্রায় শূন্যে ঠেকেছিল।
১৯৮৭-এ রাজ্য সিমেন্স ইন্ডিয়াকে ১১ একর জমি দেয়। রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সিমেন্স টেলিপ্রিন্টার, ইপিএবিএক্স-এর যন্ত্র ইত্যাদি তৈরি করতে শুরু করে। পরে ওয়েবেল সরে যায়। ২০০০ সালে কারখানার মালিকানা সরাসরি মূল সংস্থা সিমেন্স-এর কাছে চলে যায়। সংস্থার নাম হয় সিমেন্স পাবলিক কমিউনিকেশন্স।
২০০৭-এ সিমেন্স ও মোবাইল নির্মাতা নোকিয়া যৌথ ভাবে তৈরি করে নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক। সল্টলেকের এই কারখানাও তার অংশ হয়ে যায়। কিন্তু প্রকল্পের ১১ একর জমির মালিকানা সিমেন্স-এর হাতেই থেকে যায়। রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এই জমি উৎপাদন শিল্পেই ব্যবহার করতে হবে। ঠিক হয়েচিল, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো তৈরি করবে সিমেন্স। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
এখন রাজ্য সিমেন্সকে চাপ দিয়ে এই জমিতে কোনও পরিকাঠামো তৈরি করাতে পারে কি না, সেটাই দেখার। |