আকাশ পথে নিত্য অফিস যাতায়াত। মিটিং, মিছিল, যানজটে ফেঁসে রক্তচাপ বৃদ্ধি নয়। ধোঁয়া আর ধুলোয় দমবন্ধ করা নিত্য ভোগান্তির ইতি। নিছক কল্পনা নয়। বাস্তব ছবি এটাই হতে পারে। শিয়ালদহ-বি বা দি বাগ রুটে এই রোপওয়ে চালানোর নকশাও প্রাথমিক ভাবে তৈরি।
দেশের প্রথম মোনো-রেল প্রকল্প এ শহরের হাতছাড়া হয়েছে আগেই। মুম্বই ওই জায়গা দখল করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে রোপওয়ে পরিবহণ ব্যবস্থা। শুধু দেশেই নয়। গোটা বিশ্বের যাত্রী পরিবহণ মানচিত্রেই সে ক্ষেত্রে আলাদা জায়গা করে নিতে পারবে কলকাতা। কারণ পর্যটন কেন্দ্রে রোপওয়ের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহণ পরিচিত দৃশ্য হলেও শহরের যান চলাচলের অঙ্গ নয় রোপওয়ে। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণেই তা এত দিন সম্ভব হয়নি।
এ বার সেই সমস্যাকে টপকে যাওয়ার প্রযুক্তির চাবিকাঠির হদিস মিলেছে। এমনই দাবি করেছেন ৫০ বছর ধরে রোপওয়ে পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এক বঙ্গসন্তান। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার শেখর চক্রবর্তী ব্রিটিশ রোপওয়ে সংস্থা ব্রেকোতে চাকরি করতেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১৯৭৪ সালে তৈরি করেন নিজের সংস্থা কনভেয়র অ্যান্ড রোপওয়ে সার্ভিসেস।
পণ্য ও পর্যটক পরিবহণের জন্য রোপওয়ে তৈরি করে সংস্থা। |
সেই ব্যবসার পাশাপাশি গত চার বছর ধরে চলছিল অন্য এক প্রচেষ্টা। শহরের যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থায় কেমন করে ব্যবহার করা যায় দূষণহীন রোপওয়ে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেন শেখরবাবু। আর সেই গবেষণার ফসল কার্ভো রোপওয়ে। তাঁর দাবি, নয়া প্রযুক্তিতে সহজেই শহরের যান ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠতে পারবে রোপওয়ে। তিনি বলেন, “বর্তমান প্রযুক্তিতে সোজা পথেই রোপওয়ে চলে। বাঁক নিতে পারে না। সেই সমস্যার কারণেই শহরের আঁকাবাঁকা পথে রোপওয়ে ব্যবহার করা যায় না। কার্ভো রোপওয়ে সহজেই বাঁক নিতে পারবে।” তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক পেটেন্ট নেওয়া এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে যানজট ও দূষণের জোড়া সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
প্রতিরূপ তৈরি। সংস্থার দাবি, আগামী সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত তারা। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত-সহ কয়েকটি রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা। মূলত সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ মডেলে এই ব্যবস্থা চালানোর জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানাবে তারা। প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “এ ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থা কলকাতার মতো শহরে অবশ্যই স্বাগত। তবে তা চালু করতে হলে বাস্তব সমস্যা কী কী আছে, তাও দেখে নিতে হবে।”
শিয়ালদহ থেকে ডালহৌসি। এই রুটে রোপওয়ে চালানোর পরিকল্পনাও তৈরি। শেখরবাবু জানান, পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই রুট বেছে নেওয়ার কারণ শহরের অন্যতম ব্যস্ত এই পথে যান চলাচল ও যাত্রী সংখ্যার অত্যধিক চাপ। রোপওয়ের প্রতি কিলোমিটার তৈরি করতে খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে যান চলাচল ও যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থায় স্বস্তি আনতে উড়ালপুল বা মেট্রোর মতো পরিকাঠামো তৈরি অনেকটাই ব্যয়সাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, উড়ালপুলের প্রতি কিলোমিটার তৈরি করতে গড়ে খরচ হয় ৭০ কোটি টাকা। মেট্রো তৈরি করতে কিলোমিটার প্রতি খরচের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা। ব্যয়ের পাশাপাশি রয়েছে দূষণ ও গতির বিষয়। কার্ভো রোপওয়ের নির্মাতা সংস্থার দাবি, দূষণহীন এই যান ব্যবস্থার গতি থাকবে ঘণ্টায় ১২.৫ কিলোমিটার। তথ্য বলছে, কলকাতায় যান চলাচলের গড় গতি ৭ কিলোমিটার। শেখরবাবুর দাবি, প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ১৭ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। গোটা শহরকে এই যান ব্যবস্থার সুযোগ দিতে লাগবে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ছাড়াও স্টেশন তৈরি করতে জমির প্রয়োজন ন্যূনতম বলে জানান তিনি। ফুটপাথেই তৈরি হতে পারে টাওয়ার ও স্টেশন। এর জন্য টাওয়ার পিছু ২ বর্গ মিটার জায়গা হলেই যথেষ্ট বলে দাবি। |