আমানতের পরিমাণ এক লক্ষ টাকা হলে তা জমা পড়বে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর অ্যাকাউন্টে। তার বেশি হলে জমা দিতে হবে সারদা রিয়েলটি সংস্থায়। এজেন্টদের এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। লালবাজারের গোয়েন্দাদের
দাবি, জেরার মুখে সুদীপ্ত বলেছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবি-সহ বিভিন্ন ‘রেগুলেটরি অথরিটি’র হাত থেকে বাঁচতেই এজেন্টদের ওই নির্দেশ গিয়েছিলেন তিনি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ঢাকুরিয়ায় ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের অফিসে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়া হত। ওই অফিসের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজারকে জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রিনা ভুঁইয়া নামে সারদার এক এজেন্ট লেক থানায় ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত করতে কলকাতা পুলিশ সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে।
৩০ মে সুদীপ্ত ও দেবযানীকে নিয়ে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ঢাকুরিয়ার অফিসে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। বাজেয়াপ্ত করা হয় বিনিয়োগ সংক্রান্ত বহু নথি ও কম্পিউটারের ২৫টি হার্ড ডিস্ক।
দু’দিন ধরে সেই সব নথি ও হার্ড ডিস্ক পরীক্ষার পরে শনিবার গোয়েন্দারা জানান, ঢাকুরিয়ার অফিসে মাসে গড়ে ৬০ লক্ষ টাকা জমা দিতেন বিভিন্ন এজেন্ট। ওই টাকা জমা নেওয়ার পরে তাঁদের যে রসিদ দেওয়া হত, তার প্রচুর ‘কাউন্টার পার্ট’ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, লেক গার্ডেন থানায় যে মহিলা এজেন্ট অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তার রসিদের ‘কাউন্টার পার্ট’ও মিলেছে ঢাকুরিয়ার অফিসে। গোয়েন্দাদের দাবি, কম্পিউটারের যে ১০টি হার্ড ডিস্ক এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে, তাতে সারদার ভ্রমণ সংস্থার কিছু অসম্পূর্ণ হিসেব পাওয়া গিয়েছে। নথি ঘাঁটাঘাটির পরে গোয়েন্দাদের মনে হয়েছে, রসিদের যে অংশগুলি উদ্ধার করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা ওই অফিসে সংগ্রহ করা হয়েছে। |
এ দিনই এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে নরোত্তম দত্ত নামে সারদার এক এজেন্টকে বিধাননগর থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তিনি বিধাননগরের বিই ব্লকের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, মাসখানেক আগে ওই মহিলা সারদার এই এজেন্টের বিরুদ্ধে ৬ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে দায়ের করেছিলেন। নরোত্তমবাবু বিধাননগরের একটি বড় পুজো কমিটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সারদা গোষ্ঠীর ঢাকুরিয়ার অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া নথি ঘেঁটে গোয়েন্দারা নতুন করে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছেন। এর পরেই পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর আগে বিধাননগর পুলিশ সারদার প্রায় ৩০০ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পায়। বেশ কয়েকটিতেই কোনও টাকা ছিল না। শনিবার লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে দফায় দফায় জেরা করা হয় সুদীপ্ত ও দেবযানীকে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, সারদার প্রধান অফিস মিডল্যান্ড পার্কে একটি ‘ব্যাঙ্কিং হেল্প ডেস্ক’ ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, গোটা রাজ্যের আমানতকারীদের কাছ থেকে যে টাকা সংগ্রহ হত, তা জমা পড়ত ওই ডেস্কে। তার দায়িত্বে ছিলেন দেবযানী। |