পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থিতালিকা ঠিক করতে উত্তর ২৪ পরগনার বহু এলাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তৃণমূলকে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই পরিস্থিতি বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে। যার জেরে শুক্রবারও বহু ক্ষেত্রে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়নি। জেলা তৃণমূল এখনও প্রার্থিতালিকা প্রকাশও করতে পারেনি।
ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ভোটের দিন ঘোষণার বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল তৃণমূল। স্থানীয় বিধায়ককে চেয়ারম্যান করে ১১ জনের কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের সম্মতি না নিয়েই নিজেদের পছন্দ মতো প্রার্থী ঠিক করেছেন বিধায়কেরা।
জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি এ বার জেলা পরিষদে প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়াতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। রাজ্য ও জেলা স্তরের কয়েক জন নেতার মৌখিক প্রতিশ্রুতিও মিলেছিল। সেই মতো শহর এলাকা থেকে গ্রামীণ এলাকায় ভোটার তালিকায় নাম তুলেছিলেন রতনবাবু। জেলা পরিষদের যে আসনে প্রার্থী হতে চান তিনি, সেখানে বর্তমান প্রার্থী তৃণমূলেরই গৌরাঙ্গ দাস। তিনি ওই আসনটি ছাড়তে নারাজ। এখনও কাটেনি এই জটিলতা।
সব থেকে বেশি সমস্যা তৈরি হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী মনোনয়নে। বাগদা ব্লকে পরিস্থিতি বেশ গুরুতর। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের সঙ্গে ব্লক সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। জেলা নেতৃত্বের কাছে দু’জনেই পৃথক ভাবে সম্ভাব্য প্রার্থিতালিকা পেশ করেছেন। দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মতির ভিত্তিতে একটি প্রার্থী তালিকা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন দলের নেতারা। সমস্যা মেটাতে বৃহস্পতিবার মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূল অফিসে বৈঠক ডেকেছিলেন উপেনবাবু। সেখানেও সমাধান সূত্র বেরোয়নি বলে দলীয় সূত্রের খবর। যদিও উপেনবাবুর দাবি, “প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ। সব ক্ষেত্রে সকলে একমত না-ও হতে পারেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়েই তালিকা হয়েছে।” বাগদারই এক তৃণমূল নেতা অবশ্য বলেন, “মন্ত্রী সকলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করলে সমস্যা হত না।” সমস্যা মেটাতে বাগদার কিছু তৃণমূল নেতা বৃহস্পতিবার মুকুল রায়ের সঙ্গেও দেখা করেছেন। উপেনবাবু অবশ্য ঘনিষ্ঠ মহলে বলছেন, তাঁর কোনও গোষ্ঠী নেই। সকলেই তাঁর কাছে সমান।
বনগাঁ ব্লকের আকাইপুরে পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় কোন্দলের জেরে সমস্যা হচ্ছে। গাইঘাটার বিধায়ক তথা মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে দলের একাংশের মতৈক্য হচ্ছে না বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, নিজের ছেলেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড় করাতে চান মঞ্জুল। তা দলের একাংশের না-পসন্দ। জেলা নেতৃত্বের একাংশও এ ব্যাপারে আপত্তি তুলে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে মন্ত্রীকে।
দিন কয়েক আগে গোবরডাঙায় এক সভায় এসে জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়ে এলেছিলেন, বুধবারের মধ্যেই ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের সব আসনে প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হবে। শুক্রবার পর্যন্ত সরকারি ভাবে তা করা যায়নি। যদিও এ দিন জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, প্রার্থী বাছাই নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা নেই। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতেও শুরু করেছেন। |