সম্পাদকীয় ১...
অঙ্কুরে বিনাশ?
শ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের অবাধ অনুষ্ঠান লইয়া রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্বেগ যে অহেতুক নহে, তাহা স্পষ্ট। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যথার্থ সূচনা হয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়া। রাজ্যের গ্রামেগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেরূপ, তাহাতে এই পর্বেই সমূহ বাধা ও অসুবিধার আশঙ্কা আগাম ব্যক্ত করিয়াছিল কমিশন। সরকার সেই শঙ্কা তুড়ি মারিয়া উড়াইয়া দিয়াছিল। এখন দেখা যাইতেছে, জেলা হইতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশ করিতে না দিবার ভূরি ভূরি অভিযোগ, যাহা রাজভবন অবধি পৌঁছাইয়াছে। মনোনয়নপত্র পেশে অসমর্থ গুরুতর আহত বিরোধী প্রার্থীরা কলিকাতার হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলিতে ভর্তি হইতেছেন। জেলাগুলিতে বিডিও-এসডিওদের দফতর ঘেরাও করিয়া রাখিয়া প্রার্থীদের সেখানে পৌঁছাইতে বাধা দিবার, পৌঁছাইবার চেষ্টা করিলে মারধর করিয়া তাড়াইয়া দিবার অভিযোগও বিস্তর। সরকার এবং শাসক দল যথারীতি অভিযোগগুলি উড়াইয়া দিতেছে। রাজ্যবাসীর কাছে এই অভিজ্ঞতাও নূতন নয়।
বিগত নির্বাচনগুলিতেও, বিশেষত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশের পর্ব হইতেই সন্ত্রস্ত করিয়া বিডিও অফিস হইতে দূরে সরাইয়া রাখার, ভোটের দিন বুথের আশেপাশে বিরোধী সমর্থকদের ঘেঁষিতে না দিবার অভিযোগ উঠিত। কেশপুরের মতো এলাকায়, বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বামফ্রন্ট সরকারের প্রধান শরিক দল সিপিআইএমের স্থানীয় বাহুবলীদের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ উঠিত। নির্বাচনী কারচুপির ‘বৈজ্ঞানিক’ নানা পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া বিরোধী সমর্থনের ঘাঁটিতে শাসক দলের প্রার্থীদের লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিধানসভায় নির্বাচিত হওয়ার নজিরও বাম জমানারই। বামপন্থীরা হয়তো এ ব্যাপারে আরও কুশলী ছিলেন, অনেক সূক্ষ্ম ভাবে অপকর্মটি নিষ্পন্ন হইত। বামফ্রন্টের প্রতি নির্বাচকমণ্ডলীর প্রত্যাখ্যানের নেপথ্যে এই অনিয়মের অভিযোগেরও একটা ভূমিকা ছিল বইকী! ‘পরিবর্তন’ যখন আসিল, তখন এই প্রবণতাটিতেও পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বর্তমান শাসক দলের বিরুদ্ধেও একই ভাবে যে সকল ভয়ানক অনিয়মের অভিযোগ উঠিতেছে, তাহাতে সংশয় হয়, পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গেই আছে। প্রশ্নটি কেবল দলীয় আচরণের নয়। বদলার রাজনীতিতে অভ্যস্ত রাজনৈতিক দল ও তাহার সমর্থকরা তো এ ভাবেই পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিবে। মুখ্য প্রশ্ন সরকারের রাজধর্ম পালন লইয়া। যদি কোনও সরকারের বিরুদ্ধে ভোটপ্রার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ ওঠে, তবে মানিতেই হইবে, সেই সরকার পক্ষপাতমুক্ত আচরণ করিতেছে না।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথ অবাধ রাখার দায় সরকারের। বিডিও-এসডিওদের দফতর দলীয় বাহুবলী-মুক্ত রাখার দায়ও সরকারের। কেবল শাসক দলের প্রার্থীরা অবাধে মনোনয়ন পেশ করিবে, অন্য দলের প্রার্থীরা নয়, ইহা কোনও গণতন্ত্র নয়, বরং গণতন্ত্রকে অঙ্কুরেই নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র। রাজ্য নির্বাচন কমিশন গোলযোগের শঙ্কা হইতেই মনোনয়নপত্র পেশের পর্ব হইতেই সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যময় মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়াছিল। রাজ্য সরকার তাহা মানে নাই। দীর্ঘ কাল অন্য রাজ্যের পুলিশ দিয়া ভোট করাইবার গল্প ফাঁদিয়াছে। শেষে অন্য রাজ্য মুখ ফিরাইয়া লওয়ায় পরম অনিচ্ছার সহিত কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য দরবার করিয়াছে বটে, কিন্তু ইতিমধ্যে মনোনয়নপর্ব শুরু হইয়া গিয়াছে, কেন্দ্রের পক্ষেও এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বাহিনীর জোগান দেওয়া কঠিন। এমন সন্দেহ যদি দানা বাঁধে যে, রাজ্য সরকার ও তাহার সঞ্চালকরা জানিয়া-বুঝিয়াই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি প্রস্তাব বানচাল করিয়া গিয়াছেন, তাহাকে সম্পূর্ণ অমূলক বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যায় কি? অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়া জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের গণতন্ত্রে কি তবে আর তাঁহারা তত আস্থাশীল নন? মাত্র দুই বৎসর পূর্বের বিপুল জনসমর্থনের জোয়ারে ভাটার ইঙ্গিত পাইয়াই কি তাঁহারা রাজধর্ম হইতে বিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি লইতেছেন? উত্তর অজানা হইলেও প্রশ্নগুলি কিন্তু উঠিয়া পড়িয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.