|
|
|
|
অচ্ছুত নয়, বামেদের বার্তা দিলেন মনমোহন |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
ইউপিএ-র প্রথম অধ্যায়ে সমর্থন প্রত্যাহারের পর মনমোহন সিংহ সরকারের সঙ্গে বামেদের মধুচন্দ্রিমার অবসান হয়েছিল। ইউপিএ-র দ্বিতীয় অধ্যায়ের মাঝামাঝি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এ বার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের মুখে, আবার সিপিএমের সঙ্গেও নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
ব্যাঙ্কক থেকে দিল্লি ফেরার পথে বিশেষ বিমানে এই নিয়েই প্রশ্ন করা হয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। যার জবাবে তিনি বুঝিয়ে দেন, কমিউনিস্টরা আর অচ্ছুত নন তাঁদের কাছে। জানতে চাওয়া হয়, এ বারে কি আপনারা সম্ভাব্য ইউপিএ-৩ এর জন্য বামেদের কাছে পৌঁছনোর কথা ভাবছেন? নাকি আশা করেন যে, ইউপিএ-৩ সরকার হলে মমতা তাতে যোগ দেবেন? জবাবে মনমোহন বলেন, “রাজনীতিতে কোনও স্থায়ী শরিক এবং কোনও স্থায়ী শত্রু নেই। কিছু মানুষের আসার সম্ভাবনা এবং কিছু মানুষের চলে যাওয়া থাকেই। আমি মনে করি, এই বাস্তব পরিস্থিতিটাকে মানতে হবে।”
মনমোহন কিন্তু বলেননি যে, মমতার সঙ্গে আবার গাঁটছড়া বাঁধতে তিনি রাজি নন। বরং বাস্তব পরিস্থিতি হল, লোকসভা নির্বাচনের পর কার কী সংখ্যা দাঁড়ায়, সে দিকে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে আগ্রহী কংগ্রেস। মমতার জন্য এখনই দরজা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করা যে কোনও রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় নয়, সেটি বুঝতে মনমোহনের কোনও ভুল হয় না। কিন্তু এটাও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, গত কয়েক মাস ধরে মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ক্রমে খারাপ হচ্ছে। মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করেছিলেন গত সেপ্টেম্বরে। তার পর থেকে ক্রমশ সম্পর্ক খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। মমতা নিজেই কলকাতায়, হাওড়ায়, বর্ধমানে প্রতিটি জনসভায় কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছেন। মমতা বলছেন, “আমি যদি এই রাজ্যের মেয়ে হই, তা হলে আপনাদের কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আমার প্রধান কাজ হবে ২০১৪ সালে দিল্লির গদি থেকে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করা।” |
|
দিল্লি ফেরার পথে বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই |
সমর্থন প্রত্যাহার করার পর থেকে সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে তাঁর দলের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস এমন অভিযোগ একাধিক বার করেছেন মমতা। এ-ও বলেছেন যে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগকে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক’দিন আগে তৃণমূল সাংসদ কানওয়ারদীপ সিংহের অফিসে অর্থ মন্ত্রক তল্লাশি চালিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৫ জুন জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে মমতা যোগ দেবেন না। পরিবর্তে অমিত মিত্রকে সেখানে পাঠাতে পারেন। আবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও আপাতত মমতার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে চাওয়ার কোনও বার্তা দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য থেকে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এবং অধীর চৌধুরী কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকে জানান, লোকসভা ভোটের আগে কোনও শর্তেই তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করার মানে হয় না। এই আসন সমঝোতার মানে একটাই কংগ্রেসের যতটা আসন বাড়বে, সিপিএম বিরোধিতায় ঐক্যবদ্ধ ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে তার থেকে বেশি আসন বাড়াবে তৃণমূল। তার পর ভোটের পর মমতা যে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এনডিএ-তে চলে যাবেন না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ যে সম্প্রতি বেশ কয়েক বার কলকাতায় গিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন, তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের তৃণমূল-বিরোধিতার লাইনটি খুব স্পষ্ট। জয়রাম আবার সনিয়া-রাহুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এ থেকেই স্পষ্ট, এখন হাইকম্যান্ডের রাজনৈতিক লাইনটি কী।
মনমোহন আজ এটাও জানিয়েছেন যে, সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর কোনও মতপার্থক্য নেই। সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়। আরও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। যথাসময়ে তিনি রদবদল করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ বিমান থেকেই এক দিন প্রকাশ কারাট তথা সিপিএম নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছিলেন মনমোহন। ইউপিএ-র প্রথম অধ্যায়ে পরমাণু চুক্তির পক্ষে বক্তব্য রেখে কারাটকে কার্যত তিনি হুমকিই দিয়েছিলেন। এর পরেই কারাট সমর্থন প্রত্যাহার করেন। অথচ ইউপিএ-১ এর প্রথম দিকে শুধু সীতারাম ইয়েচুরিই নন, প্রকাশ ও বৃন্দা কারাটের সঙ্গেও সনিয়া এবং মনমোহন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছিলেন। ইউপিএ-২-এ মমতা সমর্থন প্রত্যাহারের পর ধীরে ধীরে আবার কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে নতুন করে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এই কাজটিতে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সঙ্গে সম্প্রতি মনমোহনের কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। রাহুল গাঁধীও সংসদের অ্যানেক্সে অনেক বার সীতারামের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কংগ্রেসের এক নেতার মতে, এখন থেকে আলোচনা করা মানেই সিপিএম সরকার গড়তে আবার সমর্থন জানাবে, এমন নয়। কিন্তু কোনও সময় দরকার হলে যাতে প্রেক্ষাপটটি তৈরি থাকে, সে জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সে দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। |
|
|
|
|
|