শিল্পের অভাবে উদ্বৃত্তের বোঝা
আয় বাড়াতে বাংলাদেশে
বিদ্যুৎ বেচতে চায় রাজ্য
বাড়তির বোঝা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ অবশেষে পেল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সৌজন্য, পড়শি রাষ্ট্র।
শিল্পায়ন তেমন না-হওয়ায় রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা যথেষ্ট নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। পরিস্থিতি এমনই যে, ঘোর গ্রীষ্মেও বিভিন্ন ইউনিট বসিয়ে রাখতে হচ্ছে, কারণ পুরো উৎপাদন কেনার মতো গ্রাহক নেই। পুরো উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহৃত না-হওয়ায় লোকসানও বাড়ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির সুযোগ এসেছে বণ্টন সংস্থার সামনে, যা হাতছাড়া করতে তারা নারাজ। তবে রফতানির বরাত পেলেও তাতে সমস্যার কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে সরকারি মহলে প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের খবর: বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে সে দেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন ভারতীয় বিদ্যুৎসংস্থার কাছে তারা এ মর্মে প্রস্তাব চেয়ে আবেদন (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) পাঠিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থ্যতা করবে কেন্দ্রীয় দুই নিগম এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম (এনভিভিএন) এবং পাওয়ার ট্রেডিং কর্পোরেশন (পিটিসি)। রফতানিতে আগ্রহী ভারতীয় সংস্থাগুলিকে ঢাকার কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে এদেরই মাধ্যমে। দফতর-সূত্রের ধারণা, বিভিন্ন রাজ্যের হরেক বিদ্যুৎসংস্থা এই রফতানির বরাত পেতে উঠে-পড়ে লাগবে। “দস্তুরমতো একটা প্রতিযোগিতা শুরু হবে। আমরাও তাতে কাউকে সহজে জমি ছাড়ব না।” প্রত্যয়ী ঘোষণা দফতরের এক কর্তার।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ রফতানির চুক্তি সই করে এসেছিলেন। ঠিক হয়েছে, বাংলাদেশ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে ভারত থেকে। ২৫০ মেগাওয়াট জোগাবে এনটিপিসি। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট বাংলাদেশের পর্ষদ কিনতে পারবে পছন্দমাফিক যে কোনও সংস্থার কাছ থেকে। ভারতীয় সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সংবহন করা হবে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের মাধ্যমে। সেই মতো সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম ব্লকের দক্ষিণগ্রাম মৌজায় ৩০ একর জমিতে ৪০০ কেভি-র সাবস্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্পোরেশন। বাংলাদেশের দিকে সাবস্টেশনটি গড়ে উঠবে ভেড়ামারায়। দুু’টির মধ্যে হাই-ভোল্টেজ লাইন টেনে বিদ্যুৎ রফতানি হবে। ২০১৩ সালের মধ্যে সীমান্তের দু’দিকেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ সেরে ফেলা যাবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক। পাশাপাশি শুরু হয়েছে বরাত দেওয়ার তোড়জোড়। “আমাদের বলা হয়েছে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য এনভিভিএন এবং পিটিসি মারফত প্রস্তাব পাঠাতে।” জানাচ্ছেন রাজ্যের এক বিদ্যুৎ-কর্তা। তাঁর দাবি, প্রস্তাব গৃহীত হলে টানা তিন বছর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির সুযোগ মিলবে। তাতে উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের সদ্ব্যবহারের সুবাদে বাড়তি আয়ের রাস্তা খুলবে।
তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিল্প-গ্রাহকের অভাবে রাজ্যে যত বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকছে, বাংলাদেশে রফতানি করে তার কত দূর সদ্ব্যবহার সম্ভব, সে সম্পর্কে বণ্টন-কর্তাদেরই অনেকে সন্দিহান। সংস্থা-সূত্রের তথ্য: এখন পশ্চিমবঙ্গে সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট চালু থাকলে দৈনিক ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকে। বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট দিলেও ৫০০ মেগাওয়াট সেই উদ্বৃত্তই থেকে যাবে। অর্থাৎ রফতানির বরাত যদি মেলেও, তবু গ্রীষ্মে বেশ ক’টি ইউনিট বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় নেই। তার উপরে আগামী দু’বছরের মধ্যে রাজ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াটের নতুন ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দৈনিক উদ্বৃত্ত বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত হাজার মেগাওয়াটে।
তাই অবিলম্বে রাজ্যে নতুন বড় শিল্প গড়ে না-উঠলে, কিংবা বাংলাদেশের মতো আরও গ্রাহক না-পেলে বণ্টন সংস্থা বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের আখেরে কোনও লাভ হবে না বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য: রাজ্যে আগামী দিনে শিল্পের সম্ভাব্য প্রসারের ভিত্তিতেই নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেগুলি গড়ে উঠছে, অথচ প্রত্যাশিত মাত্রায় শিল্পায়ন হচ্ছে না। ফলে উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ কাজে লাগানোর সুযোগ থাকছে না।
পরিস্থিতি এমন চললে বছর দুই পর রাজ্যের বিদ্যুৎসংস্থাগুলোর হাল কী হবে, তা ভেবে রীতিমতো আশঙ্কায় রয়েছেন কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.