সম্বল বলতে কাঠা দুয়েক জমির উপর দুই কামরার টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর। ভিটেবাড়ি ছাড়া সামান্য চাষের জমি অবশ্য ছিল। কিন্তু বছর দেড়েক আগে বাবার লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় বিক্রি হয়ে হয়ে গিয়েছে সেই জমি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাবার মৃত্যু শোক চেপে রেখে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে যুঝে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বেলডাঙার
|
সংগ্রাম বিশ্বাস |
সিআরজিএস স্কুলের ছাত্র সংগ্রাম বিশ্বাস ৬১৪ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে।
সাতটি বিষয়ের মধ্যে ছ’টিতেই মিলেছে লেটার মার্কস। বাংলায় ৮৩, ইংরেজিতে ৭০, ইতিহাসে ৮৩, ভূগোলে ৯২, গণিতে ৯৭, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৮ ও জীবন বিজ্ঞানে ৯৪ পেয়েছে সংগ্রাম। সাফল্যের মধ্যেও ইংরেজিতে লেটার না পাওয়ার দুঃখ যাচ্ছে না সংগ্রামের। তার কথায়, “জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ইংরেজিতে এত কম নম্বর পেয়েছি। না হলে রেজাল্টটা আরও ভাল হত।”
বাবা মারা যাওয়ার পর সংগ্রামের পরিবারে আর কোনও রোজগেরে সদস্য নেই। আয় বলতে বাড়ি সংলগ্ন একটি দোকান ঘরের ভাড়াবাবদ মাসে ৭০০ টাকা। একদিকে অনটন ও অন্যদিকে শোকে প্রথমে ভেঙে পড়েছিল বেলডাঙা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সংগ্রাম। সেই সময় পাশে দাঁড়ান স্কুলের শিক্ষকরা।
সংগ্রামের কথায়, “প্রধান শিক্ষক বলরাম হালদার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দুঃখ ভুলে পড়াশুনায় মন দিতে বলেন। তাঁর কথা অনুযায়ী কষ্ট চেপে রেখে পড়াশুনা করি। স্কুলের সমস্ত শিক্ষকরাই আমাকে সাহস যুগিয়েছে। সাহায্য করেছে।’’
সংগ্রামের মা শেফালি বিশ্বাস বলেন, “আমার ভাইদের সাহায্যেই ছেলের পড়াশুনা চলছে। বইপত্র থেকে শুরু করে সব কিছু দিয়েই সাহায্য করেছে।” তবে এই খুশির দিনেও কিন্তু দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না সংগ্রামের। জয়েন্ট দিয়ে ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে। শুরু করে দিয়েছে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনার তোড়জোড়। কিন্তু অত টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে? সেই চিন্তাতেই রাতে ঘুম হচ্ছে না সংগ্রামের। |