মনোনয়নে বাধা নানা ভাবে, তরজা চলছেই দুই জেলায়
বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পথে নানা ভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কখনও সরাসরি মারধর করে, হুমকি দিয়ে, কখনও আবার ভয় দেখিয়ে, ব্লক অফিসে সামনে জটলা করে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরেও শান্তি নেই। নন্দীগ্রাম ২ ব্লক অফিসে বৃহস্পতিবারই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন সিপিএমের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার সিপিএমের জেলাকমিটির সদস্য সুরপতি দেবনাথকে সন্ধ্যাবেলা রেয়াপাড়ায় বাড়ির কাছে একটি চা দোকানে ঘিরে ধরে একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ সুরপতিবাবুকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে নেয় তারা। নন্দীগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহাদেব বাগ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।”
মনোনয়নে বাধা নির্দল প্রার্থীকে। প্রতিবাদে অবরোধ তমলুকের চৌরাস্তায়।—নিজস্ব চিত্র।
এদিনই পাঁশকুড়া ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আগে থেকেই পাঁশকুড়া-১ ব্লক অফিসের সামনে তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কে বালিডাংরি ও রেলপুলের কাছে তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হয়েছিলেন। অভিযোগ, বাসে-ট্যাক্সিতে চেপে আসা বামফ্রন্ট নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেন তাঁরা। এমনকী বেশ কয়েকজন সিপিএম কর্মীকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পাঁশকুড়ার পুরুষোত্তমপুর থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার পথে রেলপুলের কাছে আক্রান্ত হন পাঁশকুড়া গ্রামীণ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মহীতোষ কর-সহ বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। মহীতোষবাবুরা একটি গাড়িতে চেপে ব্লক অফিসে যাচ্ছিলেন। কয়েকশো মিটার দূরে রেলপুলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে গাড়ি থেকে জোর করে নামিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। মহীতোষবাবু ছুটে পালানোর চেষ্টা করলে তৃণমূল কর্মীরা বেশ কিছ দূর পর্যন্ত তাড়া করেন। গাড়ি ভাঙচুরও করা হয় বলে অভিযোগ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসিত পাল অভিযোগ করেন, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মহীতোষবাবুকে তৃণমূলের লোকজন যে ভাবে আক্রমণ করেছে তা অমানবিক ও নিন্দনীয়।” দুপুর ২টো নাগাদ এখানেই আর একটি গাড়ি থেকে সিপিএম, সিপিআই নেতা-কর্মীদের নামিয়ে মারধর করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
তমলুকে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী
তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক অফিসের সামনে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারেও তৃণমূলের একশোর বেশি কর্মী জড়ো হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সকাল ১১টা নাগাদ সিপিএম নেতা-কর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলে তাঁরা বাধা দেন ও মারধর করেন বলে অভিযোগ। বেলা ১২টা নাগাদ কাখড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য শ্রীহরি ভঞ্জ-সহ দলের কয়েকজন কর্মী একটি গাড়িতে চেপে ব্লক অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে তৃণমূলের লোকজন শ্রীহরিবাবুকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের তরফে কড়া নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনকে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে না। এই নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হচ্ছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “প্রার্থী দেওয়ার মতো লোক খুঁজে না পেয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস নানা মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরেও একই অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের মোহনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক রমণীকান্ত জানার অভিযোগ, “গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে মনোনয়নপত্র তোলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা। দলীয় কার্যালয় থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরত্বে ব্লক অফিসে যাওয়ার সময় তৃণমূলের লোকেরা বাধা দেয়।” শেষ পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪টি ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন প্রার্থীরা। সেই ‘অপরাধে’ আবার বাড়ি ফেরার পথে বোড়াইয়ের অনুপ পাত্র ও বেগুনিয়া গ্রামের সঙ্গীতা ভঞ্জ, চন্দ্রা ভঞ্জকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূলের মোহনপুর ব্লক সভাপতি প্রদীপ পাত্র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছিলেন। তাই ভিড় ছিল ব্লক অফিসের সামনে। কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি।”
সিপিএমের মাদপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক কামের আলির অভিযোগ, “বিডিও অফিসের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল জমায়েত করায় প্রার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নতুবা আরও অনেক বেশি মনোনয়ন জমা পড়ত। আমরা চাই আতঙ্কের পরিবেশ দূর করুক পুলিশ।” শালবনিতেও সিপিআই সমর্থক বিশ্বজিৎ টুডু অভিযোগ করেন যে, তাঁর মা প্রার্থী হবেন বলে এ দিন বিডিও অফিস থেকে ডিসিআর নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নথিটি ছিঁড়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। যদিও শালবনির ব্লক তৃণমূল সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, “এই বৃষ্টিতে মানুষ বাইরে বেরোতে পারছে না, ওদের ডিসিআর ছিঁড়তে যাবে কে? নিজেরা প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। তাই অপপ্রচার করছে।”
ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরা বলেন, “সন্ত্রাস ছড়িয়ে মনোনয়নে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। আমরা বিষয়টি দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের জানিয়েছি।” তৃণমূলের বিধায়ক শঙ্কর দোলুইয়ের যদিও বক্তব্য, “প্রার্থী না পেয়ে সিপিএম অকারণে অভিযোগ করছে। জেলার কোথাও সন্ত্রাসের পরিবেশ নেই। সর্বত্রই সব দলের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন।”
বুধবার গ্রাম পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ১০৪টি। এর মধ্যে তৃণমূলের ৪৬টি, সিপিএমের ৩২টি। বিজেপি, কংগ্রেস এবং নির্দল প্রার্থীরাও মনোনয়ন জমা দেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৪ জন মনোনয়ন জমা দেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন সিপিএমের ৭ জন তৃণমূলের ৫ জন বিজেপি, ২ জন কংগ্রেস ও ২ জন নির্দল। তবে প্রথম দিনে জেলা পরিষদের আসনে কোনও প্রার্থী পড়েনি। বৃহস্পতিবার একটানা বৃষ্টির মধ্যেও অনেক বেশি মনোনয়ন জমা পড়েছে। জেলা পরিষদেও একাধিক মনোনয়ন জমা পড়েছে। যে শালবনিতে বুধবার একটিও মনোনয়ন জমা পড়েনি, এ দিন সেখানে ৭ জন তৃণমূল সমর্থক মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। গড়বেতায় মনোনয়ন জমা না পড়লেও ডিসিআর কেটেছেন কয়েকজন। আজ, শুক্রবার মনোনয়ন জমার সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.