|
|
|
|
ঝগড়া করার আর কেউ রইল না
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় |
আমার বন্ধু ঋতুর মৃত্যু নিয়ে লিখতে বসব, এটা কোনও দিন ভাবিনি জানেন! এ দিন সকালবেলা ডাবিং করতে করতে হঠাৎ এক সাংবাদিক বন্ধু ফোন করলেন। তাঁর কাছ থেকেই খবর পেলাম। কিন্তু ঋতুর শরীর খারাপ নিয়ে এর আগেও অনেক বার
অনেক রটনা শুনেছি। কিন্তু কেন জানি না মনে হল, এটা বোধহয় সত্যি। সঙ্গে সঙ্গে সৃজিতকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এই বাড়িটা আমার বহু পরিচিত। আমি একদম এসি পছন্দ করি না। তাই আমি এই বাড়িতে ঢোকার এক ঘণ্টা আগে ঋতু বাড়ির সব এসি বন্ধ করে দিত আমার জন্য। আমার জন্য স্পেশাল চা বানিয়ে রাখত। আজ সকালে যখন পৌঁছলাম, তখন এগুলো করার আর কেউ নেই। ঋতু দেখলাম সেই দু’টো এসি চালিয়ে রেখেছে!
এত কষ্ট হচ্ছিল যে, আমি ওই ঘরেই ঢুকিনি। ঋতু আমার বন্ধু। ওকে এই ভাবে দেখতে হবে আমায়? আমার স্ত্রী অর্পিতাকে প্রায় দু’বছর আগে বলেছিলাম, “যদি আমার কিছু হয় তা হলে দু’জন মানুষের কাছে যেও। এক জন আমার এক সাংবাদিক বন্ধু। অন্য জন ঋতুপর্ণ ঘোষ।” ওর ওপর আমার পরিবারের এতটাই ভরসা ছিল। খুব খারাপ সময় চলে গেল ঋতু। ইট ইজ আ হিউজ হিউজ হিউজ লস ফর টলিউড। এই সময়টা ইন্ডাস্ট্রির খুব দরকার ছিল ঋতুকে। |
|
ঋতুপর্ণ ঘোষের বাড়ির বাইরে ভিড় সামলাচ্ছেন প্রসেনজিৎ। —নিজস্ব চিত্র |
কত কথা মনে পড়ছে আজ। আমি ৩০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। ‘যত্ন’ নিয়ে ফিল্ম করা কাকে বলে সেটা ঋতু জানত। ওর থেকে বেশি ‘যত্ন’ নিয়ে ছবি কেউ করতে পারত না। আজকে সকালে খবর পাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে অমিতজি, জয়াজি, অভিষেক, ঐশ্বর্যাকে খবর দিলাম। ওরা সবাই বাকরুদ্ধ।
জানেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে আমার অনেক ঝগড়া হত! আজকে যখন দেখছিলাম ওর মৃতদেহটা, খুব রাগ হচ্ছিল। আমার আর ডা. রাজীব শীলের কথা যদি শুনত, তা হলে ঋতু এত অল্প বয়সে চলে যেত না। পইপই করে বলেছিলাম শরীর নিয়ে অত কাটাছেঁড়া করিস না। বলেছিলাম, অ্যাক্টিং নিয়ে অবসেশনটা ছাড়। বলেছিলাম, অত ওষুধ খাস না। কিন্তু শুনল কই!
ওই অপারেশন করার পর থেকেই তো শরীরটা পুরো ভেঙে গেল।
কত কত স্মৃতি আজকে ঘিরে ধরেছে মনটাকে। মনে আছে ‘চোখের বালি’র সময় আমি এক দিন রেডি হয়ে বসে আছি। কিন্তু ঐশ্বর্যা রাই তখনও সেটে এসে পৌঁছয়নি। ঋতু আমাকে প্যাক আপ করে দিল। তার পর নাকি ঐশ্বর্যাকে বলেছিল, “সিনিয়র অ্যাক্টরকে ওয়েট করানো আমি পছন্দ করি না।” এই মূল্যবোধগুলো চলে যাচ্ছে আজকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে।
আবার ঐশ্বর্যাই এক বার আমার সঙ্গে ওর ঝগড়া মিটিয়ে ছিল। দু’জনের জন্য খাবার এনে, দু’জনকে বুঝিয়েছিল আমরা যেন আর ঝগড়া না করি।
শেষ কয়েক মাস অনেক কথা হত আমাদের। কালকে দুপুরেও ট্যুইটারে তো বটেই, বিবিএম-এও
কথা হয়েছিল।
মনটা হু হু করছে। কোথায় চলে গেলি বন্ধু, আমায় ছেড়ে? আমার সঙ্গে ঝগড়া করার আর কেউ রইল না। ভাল থাকিস। |
|
|
|
|
|