দাউদ ইব্রাহিমের বেশ কিছু সাগরেদ লুকিয়ে রয়েছে ব্যাঙ্কক শহরে। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে এমনই খবর। তাদের এখনই ফেরত পেতে চায় নয়াদিল্লি। সেই লক্ষ্যেই তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি সারলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যার ফলে তাইল্যান্ডে দাউদ-ঘনিষ্ঠ ছোটা শাকিলের ডান হাত মুন্না ঝিংড়াকে পাওয়ার ব্যাপারে পথ অনেকটাই পরিষ্কার হল।
জাপান সফর সেরে দেশে ফেরার পথে তাইল্যান্ডে এলেন মনমোহন। কেউ কেউ চেয়েছিলেন, তাইল্যান্ডের বদলে ফিলিপিন্স হয়ে ফিরুন প্রধানমন্ত্রী। জাপানের মতো ফিলিপিন্সেরও চিনের সঙ্গে বিবাদ। তাই শিনজো আবের দেশে যে আলোচনা শুরু করেছেন মনমোহন, তা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
কিন্তু তাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে নয়াদিল্লি। কারণ, দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গীদের হাতে পাওয়া। কারণ, ক্রিকেট জুয়ার তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননও বলেছেন, “ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়টি তো প্রথমে আমরা জানতে পারি বিদেশের সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়াতেই। এ বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষিত থেকে পৃথক তদন্ত হচ্ছে।” |
তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মনমোহন সিংহ। বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি। |
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, দাউদের যে সাগরেদরা এই শহরে লুকিয়ে রয়েছে, তাদের অনেকেই ক্রিকেট জুয়ার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি আইপিএল কেলেঙ্কারির পরে ডি-কোম্পানির নাম ওঠায় ছোটা শাকিল দাবি করেছিল, তাদের সঙ্গে জুয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ব্যাঙ্ককে দাউদের বেশ কিছু এজেন্ট নানা নামে ব্যবসায়ী সংস্থা খুলে অফিস ভাড়া নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। তাদের বেশ কয়েক জন ক্রিকেট বেটিং ও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
দিল্লির বক্তব্য, তদন্তের স্বার্থেও তাদের কাউকে কাউকে হাতে পাওয়া জরুরি। প্রধানমন্ত্রী তাই আজ তাইল্যান্ডের সুন্দরী প্রধানমন্ত্রী, ৪৬ বছরের সিনাওয়াত্রার সঙ্গে অন্যান্য চুক্তির পাশাপাশি প্রত্যর্পণ চুক্তিও করেন। এর ফলে ক্রিকেট জুয়া তো বটেই, তা ছাড়াও মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ, সাইবার অপরাধ সব দিক থেকেই তদন্তে সুবিধা হবে বলে বক্তব্য দিল্লির। ২০১২ সালে এই মহিলা প্রধানমন্ত্রীই দিল্লি এসে প্রথম দু’টি চুক্তি করেছিলেন। এ বার পাল্টা সফরে এসে মনমোহন একাধিক চুক্তি ও মউ সই করলেন।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শুধু দাউদ-সাগরেদরাই নয়, ছোটা রাজনও এই মুহূর্তে এখানেই লুকিয়ে রয়েছে। ছোটা রাজনকে এক বার ধরতে গিয়েও ধরতে পারেনি ভারত।
এ ছাড়াও ভারতের নজর রয়েছে তাইল্যান্ডে দাউদের দলের অন্যতম পাণ্ডা মুন্না ঝিংড়ার দিকে। মুন্না আসলে দাউদ-ঘনিষ্ঠ ছোটা শাকিলের ডান হাত। ছোটা শাকিলের নির্দেশে সে ছোটা রাজনের উপরে হামলাও চালিয়েছিল। তাকে ভারতে নিয়ে আসার বন্দোবস্ত করতে সিবিআই ও গোয়েন্দা অফিসারেরা ব্যাঙ্কক যান। মুন্নার ঠিকুজি-কুষ্ঠি আগেই ইন্টারপোলকে দেওয়া ছিল। কিন্তু পাকিস্তানও মুন্নাকে পাওয়ার জন্য দাবি জানায়। ইসলামাবাদের দাবি, মুন্না আসলে পাকিস্তানের নাগরিক। তার নাম মহম্মদ সালিম। তার প্রমাণে নথিপত্রও দিয়েছে পাকিস্তান। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, দাউদকে বাঁচাতেই পাকিস্তান এই কৌশল নিয়েছে। দিল্লি পাল্টা প্রমাণ হিসেবে মুম্বইবাসী মুন্না-পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ-র নমুনা জমা দিয়েছে। তাই-বিদেশমন্ত্রী যখন ভারতে এসেছিলেন, তখনও বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়। তাই-বিদেশমন্ত্রী অবশ্য কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। তার পর থেকেই তাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, অতীতে সৌদি আরব থেকে সন্ত্রাসবাদী জাকিবুদ্দিন আনসারিকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও একই রকম সমস্যা হয়েছিল। তবে এ বার চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরে মুন্নাকে হাতে পাওয়ার আশা অনেকটাই বেড়ে গেল।
|