রাজার আমলে তৈরি একাধিক দিঘির মালিকানা নিয়ে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট ও মৎস্য দফতরের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একই দিঘির মালিকানার দাবি দুই তরফেই করা হয়েছে। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সদস্য কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “পুরানো রেকর্ড খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, বৈরাগী এবং ডাংগোরাই দিঘির মালিকানা দেবোত্তর ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের নামে। আয় বাড়াতে ওই দুটি দিঘি লিজ দেওয়ার প্রস্তুতির কথা মৎস্য দফতরের কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফের চিঠি দেওয়া হবে।” জেলা মৎস্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিজয় ঘড়াই বলেন, “ওই দিঘি দুটির মালিকানার পুরানো নথি দফতরের নামে রয়েছে। যে কেউ মালিকানা দাবি করতে পারেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে উত্তর এলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কোচবিহারের ডাংগোরাই ও বৈরাগী দিঘির মালিকানা দাবি করেন। এই বিষয়টি মৎস্য দফতরকে জানিয়েও দেওয়া হয়। এমনকী ওই দুটি দিঘি সরাসরি মাছ চাষের লিজ দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগ নেন ট্রাষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মৎস্য দফতরের তরফে জানানো হয় ওই দুটি দিঘির মালিকানার নথি তাঁদের হাতে নামে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দফতরের ডিরেক্টরের চিঠি পাঠানো হয়। যদিও ট্রাষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ মৎস্য দফতরের ওই দাবি মেনে নেননি। তাঁদের পাল্টা দাবি, পুরনো নথি থেকে প্রমাণ হবে দিঘিগুলি মৎস্য দফতরের নয়।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, রাজাদের আমলে তৈরি বিভিন্ন দিঘির মালিকানা মৎস্য দফতরের হাতে আছে বলে তাঁরা জানতেন। সম্প্রতি আয় বাড়াতে দেবোত্তর ট্রাস্টের কর্তারা সম্পত্তির হিসেব ও নথি খতিয়ে দেখতে বসে জানতে পারেন বৈরাগী ও ডাংগোরাই দিঘির তাঁদের থাকলেও মৎস্য দফতর লিজ দিচ্ছে। এপ্রিল মাসে ওই দুটি দিঘির লিজের মেয়াদ শেষ হলে দেবোত্তর কর্তারা দিঘি দুটি নিজেদের আওতায় আনতে উদ্যোগী হন। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরুপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “রাজাদের আমলে মন্দির লাগোয়া এলাকায় পূর্ণ্যার্থীদের সুবিধের কথা ভেবে বৈরাগী ও ডাংগোরাই দিঘি খনন করা হয়। শুধু ওই দুটি দিঘি নয়। শহরের সমস্ত দিঘির মালিকানা দেবোত্তরের হাতে ফিরিয়ে আনা জরুরি। এটা হলে আয় বাড়বে। দিঘি সংরক্ষণের সমস্যাও মিটবে।” দিঘি দুটি লিজ দিয়ে বছরে গড়ে ২ লক্ষ টাকা আয় বাড়বে। আয় বাড়াতে শহরে গুঞ্জবাড়ি ও জেনকিন্স স্কুল লাগোয়া পরিত্যক্ত জমি ব্যবহার করে পিপিপি মডেলে ৪০টি স্টল ও কম খরচে চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কাজে প্রত্যন্ত এলাকার আসা বাসিন্দাদের জন্য অতিথি নিবাস তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। ভক্তদের দেওয়া রুপোর গয়না গলিয়ে স্মারক তৈরি করে বিক্রির প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। |