সহপাঠীর সঙ্গে গোলমালের জেরে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কোচবিহারের রামভোলা হাইস্কুলে মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে। ওই দিন রাতে পরিবারের লোকজন জখম ছাত্রকে জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালে ভর্তি করান। বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষকের নামোল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রের মা সহর বিবি। এ দিন কোচবিহারে প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে ঘটনার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের কর্তারা। পাশাপাশি, অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে রামভোলা হাইস্কুলে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রের নাম মমিজুল হক। বাড়ি টাকাগছ এলাকায়। মঙ্গলবার ইংরেজি বিষয়ের পঞ্চম পিরিয়ড শুরুর আগে এক সহপাঠীর সঙ্গে তার বাদানুবাদ হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই সহপাঠী মমিজুলের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ জানায় শিক্ষকের কাছে। তাতে মেজাজ হারিয়ে ক্লাসে রাখা বেত দিয়ে মমিজুলকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। বেতের আঘাতে ছাত্রটির দুই পা জুড়ে কালসিটে দাগ পড়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে স্কুলের জামা-কাপড় না ছেড়েই মমিজুল বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকায় বাড়ির লোকর সন্দেহ হয়। যন্ত্রণাকাতর ছেলেকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের লোকেরা।
বুধবার ওই হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ছাত্রটির দাবি, “আমি বাজে কথা বলেছি বলে এক বন্ধু স্যরকে নালিশ করে। ও আসলে বাজে কথা বলেছিল। স্যার আমার কোনও কথা না শুনে বেত দিয়ে মারতে থাকেন। এখনও ব্যথা হচ্ছে। জখম ছাত্রের মা সহর বিবি বলেন যন্ত্রণার জন্য ছেলে বাড়ি এসে স্কুলের পোশাক পর্যন্ত বদলানোর অবস্থায় ছিল না। বাধ্য হয়ে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। পুলিশে অভিযোগ হয়েছে।” এ দিকে ঘটনাচক্রে বুধবার কোচবিহারে প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে যান জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। কমিশনের সদস্য বিনোদ কুমার টিকো বলেন, “খুবইউদ্বেগজনক ঘটনা। বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।” রামভোলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিতান রায় বলেন, “ওই শিক্ষক যা করেছেন, তা অত্যন্ত গর্হিত। এদিন বিষয়টি জানার পরেই কয়েকজন সহকর্মীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করব।” অভিযুক্ত শিক্ষক অনুপম বণিক সংবাদ মাধ্যমের সামনে মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, “যা বলার প্রধান শিক্ষককে বলব।” ছাত্র পরিষদ জেলা সভাপতি অরিন্দম দে জানান, ওই স্কুলে এর আগেও শিক্ষকের মারে ছাত্র জখম হয়। তিনি বলেন, “এবার অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ওই স্কুল অচল করে আন্দোলন করব।”
|