ধানের বদলে আমচাষ খেত বদলেছে বাগানে |
নারায়ণ দে • আলিপুরদুয়ার |
কয়েক বছর আগেও যে জমিতে সোনা রঙের ধানের শিস হাওয়ায় দুলে উঠত, সেখানে এখন গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর, মল্লিকার মত আম। ধানের জমি বদলে গিয়েছে আমের বাগানে। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে শালকুমার হাট এলাকার চিরাচরিত ধান চাষের প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে বর্তমানে তৈরি হয়েছে আম বাগান। বেশি লাভের মুখ দেখতেই ধান চাষ ছেড়ে আমের দিকে ঝুঁকেছেন। ঘটনা জানার পর খোঁজখবর করেছে কৃষি দফতর।
আলিপুর মহকুমা কৃষি অধিকর্তা অরুপ কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমিতে জলের সমস্যা থাকলে চাষের খরচ বেড়ে যায়। কৃষি-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও বিভিন্ন এলাকায় বিকল্প চাষে ঝোঁক বাড়ছে। আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকে আম চাষ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” আট বছর আগে দুই বিঘা জমিতে মালদহ থেকে আনা আম র চারা লাগিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সদস্য নগেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর কথায়, “এই এলাকায় আমাদের জমিতে জল দাড়ায় না। ধান চাষের সমস্যা রয়েছে। লাভ বেশি হত না। সেই কারণে বিকল্প চাষ হিসাবে আমের চাষ শুরু করি।” |
আলিপুরদুয়ারের শালকুমারহাটে আম বাগান। —নিজস্ব চিত্র। |
চাষিরা জানান, ধানের বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ-সহ বিঘা পিছু নূন্যতম ১৫০০-১৭০০ টাকা খরচ। বিঘা প্রতি ৩ কুইন্ট্যাল ধান মেলে। সবসময় সরকারের সহায়ক মূল্যে ধান কেনার শিবির বা ব্যবস্থা না থাকায় ৯০০- ১০০০ টাকা কুইন্ট্যালে খোলা বাজারে ধান বিক্রি করতে হয়। সেখানে ওই এক বিঘা জমিতে ৬৪টি’র মত গাছ লাগানো হচ্ছে। কলমের খরচ, পরিচর্চা বাবদ ১৬ হাজার টাকার মত খরচ হচ্ছে। লাভ ১০-১২ হাজার।
নগেন্দ্রবাবু জানান, ১২ বিঘায় প্রায় ৮০০ রকম আম চারা লাগিয়েছিলাম। এক বছর পর থেকেই ফলন শুরু হয়েছে। ২৫ হাজার টাকার মত খরচ। প্রায় দেড় লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে। প্রতি বছরের উৎপাদন খরচের বিষয় নেই। পরিচযার্র খরচ লাগছে। এক বছর পর থেকেই ফল পেতে শুরু করেছি।
কাঁঠালবাড়ি মেচ বিলের বাসিন্দা প্রণব ভৌমিক তিন বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন। তিনি বলেন, “আমচাষ ধানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত লাভজনক। যদিও প্রয়োজনীয় সার বাজারে মিলছে না। উদ্যান পালন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।” শালকুমার হাটের বাসিন্দা অনন্ত রায় বলেন, “চার বিঘা জমিতে ধান ছেড়ে আম চাষ করেছি। এবং প্রায় ২০ বিঘা জমি লিজে নিয়ে সেখানেও আমবাগান তৈরি করেছি। বছরে অনেক বেশি লাভ হচ্ছে।” উদ্যান পালন বিভাগের জেলা আধিকারিক শুভাশিস গিরি বলেন, “চাষিরা যোগাযোগ করলে এলাকায় গিয়ে হাতেকলমে আম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আমরাও খোঁজখবর শুরু করেছি।” |