মনজিতের জেদে ‘ফেল’ প্রতিবন্ধকতা |
কনুইয়ের পর থেকে দু’হাত নেই। অভাব নিত্য সঙ্গী। কিন্তু তা দমিয়ে রাখতে পারেনি। উল্টে সংসারকে সাহায্য করার জন্য প্রতিবেশীর জমি দেখাশোনার কাজ করেছে বানারহাট বলাকা পরিমল হিন্দি হাই স্কুলের ছাত্র মনজিৎ মঙ্গর। কনুইয়ে ভর করে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে গিয়েছে। ‘রাইটারের’ সাহায্য ছাড়া দুই কনুইয়ের মাঝে কলম গুঁজে জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে বি গ্রেডে পাশ করে এখন এলাকার ‘হিরো’ ওই ছেলে। |
তাঁদের সামান্য ভুলের কারণে যে ছেলেটা রাইটার পায়নি তা অস্বীকার করেননি স্কুলের শিক্ষকরা। ফলাফল দেখে আপ্লুত হয়ে তাঁরা জানান, আগামী দিনে ওই ছাত্রের পড়াশোনার দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। মনজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রশেখর যাদব বলেন, “ওকে রাইটার না-দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে যখন আমরা বিষয়টি উপলব্ধি করি তখন আর উপায় ছিল না। এখন থেকে মনজিতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” বি গ্রেডে পাশ করা মনজিতের প্রাপ্ত নম্বর ২৬৪। গত বছর একই ভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে সফল হতে পারেনি। কিন্তু হাল ছাড়েনি। দু’হাতের কনুইতে কলম গুঁজে লিখতে অনেকটা সময় লেগেছে। হাতে সময় পেলে জানা প্রশ্নের উত্তর ছাড়তে হত না। রাইটার পেলে ভাল ফল করত বলে বাড়ির দাওয়ায় বসে জানায় মনজিৎ।
বানারহাট থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ডুডুমারি বস্তির বাসিন্দা ওই ছাত্র জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। পড়ার প্রতি এতটাই আগ্রহ যে নিজের চেষ্টায় সে কনুইতে কলম গুঁজে লেখা অভ্যাস করে ফেলে। পরিবারে মা, দুই বোন আর এক দাদা আছেন। দিনমজুর বাবা সরণ মঙ্গর পাঁচ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বাবা নিখোঁজ হওয়ার পরে দাদা দিলীপ কেরলে গিয়ে দিনমজুরি করে যতটুকু টাকা বাড়িতে পাঠান তা দিয়ে সংসার চলে না। নিরুপায় হয়ে বোন ঊষা নবম শ্রেণির পরে পড়াশোনা ছেড়ে বাড়ির কাজ শুরু করেছে। মনজিৎ নিজে গ্রামের এক ব্যক্তির জমি দেখাশোনার কাজ করে কিছু রোজগারের ব্যবস্থা করে নেয়। স্কুলে পড়াশোনার বাইরে গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করতে পারেনি সে। একমাত্র টিনের ঘর মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেখানেই গাদাগাদি করে রাত জেগে পড়েছে মনজিৎ।
ওই ছাত্রের কথায়, “জমিতে যেন গরু না ঢোকে সেটা দেখার কাজ করে মাসে পাই ১ হাজার ২০০ টাকা। কিছু টাকা সংসারে দিয়ে বাকিটা পড়ার কাজে লাগিয়েছি। গৃহশিক্ষক রাখতে পারিনি।” মনজিতের মা সনিতা দেবী “ছোট ছেলের সাফল্যে খুশি। তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগে জমানো টাকায় কেনা সাইকেলে চেপে ছেলে স্কুলে যাতায়াত করেছে। কী কষ্টে পড়াশোনা করেছে সেটা আমি জানি। ওকে সাহায্য করতে পারিনি। করতে পারলে আরও ভাল করতে পারত।”
মনজিতের প্রতিবেশীদের অনেকে চা বাগানের বিঘা শ্রমিক। প্রতিবন্ধী ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে শোনার পরে তাঁদের অনেকে মনজিতের বাড়ি ভিড় করেছেন। |