উপনগরী প্রকল্প খতিয়ে দেখতে কমিটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্পের কাজে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে দফতরের দুই বাস্তুকার ও ঠিকাদার সংস্থার কর্তাকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবার এসজেডিএ’র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁদের বিরুদ্ধেও পুলিশে অভিযোগ দায়েরের দাবি তুলেছে বামেরা। তার ২৪ ঘণ্টার মাথায় বুধবার এসজেডিএ বোর্ড মিটিংয়ে বাম জমানায় শিলিগুড়িতে চাঁদমনি চা বাগানের জমিতে গড়ে তোলা উপনগরী প্রকল্পের বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের ‘রিভিউ কমিটি’ গড়লেন কর্তৃপক্ষ। বর্তমান এসজেডিএ বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত বামেদের উপর চাপ বাড়াতে বলে মনে করছে নানা মহল।
গৌতমবাবু বলেন, “ওই উপনগরী তৈরির ক্ষেত্রে কী পদ্ধতিতে কাজ হয়েছে, জমির মূল্য কী ভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাঁরা করেছেন তাঁদের যোগ্যতা যথাযথ ছিল কি না সে সব বিস্তারিত দেখা হবে।” মন্ত্রীর দাবি, প্রায় ৪০৬ একর জমিতে ওই উপনগরী গড়ে ওঠে। সব মিলিয়ে সেখানে প্রায় ৭০০ একর জমি ছিল। উপনগরীর জন্য যে জমি দেওয়া হয়েছিল সরকারি হিসাবে তার মূল্য ছিল প্রায় ৯০ কোটি। পরে দাম কমিয়ে ধরা হয় ৬৭ কোটি। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পদাধিকার বলে তা মাত্র ১৩ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকায় শিল্পপতির হাতে তুলে দেন উপনগরী গড়তে। সে সব বিস্তারিত এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখে মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৯৯১ সাল থেকে এসজেডিএ’র কাজকর্ম খতিয়ে দেখে জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে জানান মন্ত্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়েও ইতিমধ্যে একাংশ কাজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিষয়টিকে আমল দিতে চান না প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর তির্যক মন্তব্য, “হাটে যখন চোর ধরা পড়ে তখন সে-ও বড় গলা করে চোর চোর বলে চিৎকার করে বাঁচার জন্য।” তাঁর অভিযোগ, “বর্তমান এসজেডিএ’র দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতা-কর্তাদের আড়াল করতেই নানা চেষ্টা চলছে।” অশোকবাবুর দাবি, চাঁদমণি চা বাগানের জমিতে উপনগরী তৈরির ক্ষেত্রে আদালতে একাধিক মামলাও হয়। ডিভিশন বেঞ্চ থেকে রায় দেওয়া হয় ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনও বেআইনি ব্যাপার নেই। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “চা বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উপনগরী নির্মাতারা জমি নিয়েছিলেন। চুক্তিতে এসজেডিএকে ২০ একর জমি দেওয়ার কথা ছিল।”
অন্য দিকে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো এবং এসটিপি (সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) তৈরির কাজে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোকে কালো তালিকাভুক্ত করল এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ। কাজের বরাত পেতে জন্য যে ৫ কোটি টাকা তাদের জমা রাখতে হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই অভিযোগে দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (বিদ্যুৎ) প্রবীন কুমারকে পুলিশ গ্রেফতারকরে। মঙ্গলবার আদালত তাঁর ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। তার বেতন আটকে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন এসজেডিএ প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমানে সদস্য রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। বৈঠকে উপস্থিত বিধায়ক শঙ্কর মালাকার প্রশ্ন তোলেন দুই বাস্তুকার এবং বরাত পাওয়াঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারের নামে এসজেডিএ’র তরফে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু ওই কাজের ওয়ার্ক অর্ডার যিনি দিয়েছেন সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধে কেন পুলিশে অভিযোগ হয়নি? নাম না করলেও শঙ্করবাবুর অভিযোগের তির প্রাক্তন মুখ্য কার্য নির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারের দিকেই। রুদ্রবাবু অবশ্য এ সব ব্যাপারে এ দিনও কিছু বলতে চাননি। শঙ্করবাবু বলেন, “যে আধিকারিক ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।” গৌতমবাবু জানান, প্রাথমিক ভাবে যা জানা গিয়েছে তার ভিত্তিতে অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। |