|
|
|
|
কাজের মূল্যায়নে আগ্রহ নেই জেলা পরিষদের কর্তাদের
নুরুল আবসার • কলকাতা |
জিতলেই মিলবে মোটা টাকার প্রাইজ। নিজেই নিজেকে দেওয়া যাবে নম্বর। তবু প্রতিযোগিতায় জেলার কর্তাদের আগ্রহ অতি সামান্য।
জেলা পরিষদগুলিকে কাজে উৎসাহ দিতে তাদের কাজের স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। ফলের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রক সেরা জেলা পরিষদকে মোটা টাকা আর্থিক পুরস্কারও দেয়। কিন্তু নিজেদের কাজের পর্যালোচনায় আগ্রহ দেখায়নি অধিকাংশ জেলা পরিষদ। মাত্র ছয়টি জেলা পরিষদ অংশ নিয়েছে।
অথচ ছবিটা এমন ছিল না। ২০০৬-০৭ আর্থিক বছর থেকে স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হয়। ২০০৯-১০ পর্যন্ত সবক’টি জেলা পরিষদ অংশ নিয়েছে, জানালেন পঞ্চায়েত দফতরের এক প্রাক্তন কর্তা। “কেন এখন এ বিষয়ে আগ্রহ কমছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার,” বলেন তিনি। শেষ স্ব-মূল্যায়ন হয়েছে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে। ছয়টি জেলা পরিষদ এতে অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে নেই উত্তরবঙ্গের কোনও জেলা। সেরার পুরস্কার পেয়েছে হাওড়া জেলা পরিষদ। কিন্তু মাত্র ছয় প্রতিযোগীর মধ্যে জিত তাদের জয়ের আনন্দ একটু ফিকে করে দিয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার কথায়, “আরও বেশি জেলা পরিষদ অংশ নিলে হাওড়ার পুরস্কারের জৌলুস অনেকটা বাড়ত।” বাকি পাঁচটি জেলা পরিষদ হল পশ্চিম মেদিনীপুর, নদিয়া, বর্ধমান, বীরভূম এবং বাঁকুড়া।
অথচ স্ব-মূল্যায়নের মাধ্যমে জেলা পরিষদের কাজের একটি বিস্তারিত ছবি পাওয়া সম্ভব। নিজস্ব আয় কতটা বাড়ল, কত সম্পদ সৃষ্টি হল, এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের বিবরণ, বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রাপ্ত টাকার খরচের বিবরণ, সবই উল্লেখ করতে হয় স্ব-মূল্যায়নের ফর্মে। তার ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট, এবং রাজ্য সরকারের সুপারিশ পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকে। কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রকের নির্দেশে ‘ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স’ (আইএসএস) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা হাওড়ায় এসে জেলা পরিষদের কাজকর্ম খতিয়ে দেখে। হাওড়ার সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরপর দু’বছর আমরা এই পুরস্কার পেলাম। এর ফলে আমরা আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজকর্মে মনোনিবেশ করব।”
কিন্তু কেন স্ব-মূল্যায়নে আগ্রহ কমছে? ২০১০-১১ সালে মাত্র আটটি জেলা অংশ নিয়েছিল এতে, পরের বছর অংশ নিয়েছে ছয়টি জেলা। এ কি খারাপ ছাত্রের পরীক্ষাভীতির মতোই ঘটনা? তা মানতে রাজি নয় অনেক জেলা। কোচবিহারের জেলা সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে সাফল্যের পুরস্কার, প্রশংসা পেয়েছি। কিন্তু স্ব-মূল্যায়নের ফর্ম পূরণ করার জন্য যদি সময় না পাওয়া যায়, কী করা যাবে? দূরের জেলাগুলিতে ফর্ম পাঠানোর ক্ষেত্রে দফতরের গাফিলতি আছে।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতি গাঁধী হাজরা বলেন, “আমাদের কাজের খতিয়ান সব তৈরি আছে। কিন্তু স্ব-মূল্যায়নের ফর্মই আমরা পাইনি।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য পঞ্চায়েত কর্তারা। দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ থাকলেও তা পরে আরও এক মাস বাড়ানো হয়। ফর্ম পূরণ করে পাঠানোর জন্য বার বার চিঠিও দেওয়া হয় জেলা পরিষদগুলিকে। কিন্তু ছয়টির বেশি জেলা পরিষদ এতে অংশ নেয়নি। প্রতি বছর একই ঘটনা ঘটে।” |
|
|
 |
|
|