বাবার পেশা হকারি। সকাল থেকে সন্ধ্যা সাইকেলে চেপে বিভিন্ন দোকানে ও বাড়িতে পাঁউরুটি ফেরি করেন। ওই রোজগারে স্ত্রী ও তিন ছেলের পেট চালানোই দায়। তবু শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আর্থিক সাহায্য ও নিখরচায় পড়ানোর জন্য সেই পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি এক টানা ক্লাসে প্রথম হয়ে এসেছে সোনামুখী বি জে হাইস্কুলের ছাত্র আজিজুল মিদ্যা। এ ভাবেই মাধ্যমিকে ৬৬৭ নম্বর পেয়ে সে স্কুলের সেরা তো বটেই, ৯৫ শতাংশ নম্বরের দৌলতে বাঁকুড়া জেলার শীর্ষস্থানীয়দেরও অন্যতম।
|
আজিজুল |
|
প্রশান |
আজিজুল তার এই সাফল্যের সবটাই উৎসর্গ করেছে নিজের স্কুলকে। তার কথায়, “ভাল করে খেতে পাই না। বাবার সামর্থ্য নেই। স্কুলের বই-খাতাপত্র, পেন সবই কিনে দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিনা পয়সায় টিউশনি পড়িয়েছেন। যার ফলে এতটা এগোতে পেরেছি। উচ্চ মাধ্যমিকে খরচ আরও বেশি। এর পর কী হবে জানিনা!” ছেলের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাবা আসগর আলি মিদ্যাও। বলছেন, “স্কুলের কাছে কৃতঞ্জতার শেষ নেই। কিন্তু ভবিষ্যত কী?” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন চোংরে বলেন, “ছাত্রটির মধ্যে বড় হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। সেই কারণেই দুঃস্থ পরিবারের ছাত্রটিকে আমরা সমস্ত ধরনের সাহায্য করে এসেছি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির পরেও সেই সাহায্য চালিয়ে যাব। এ সময়ে সরকারি বা বেসরকারি স্তরে সাহায্য পেলে তা ওর পক্ষে সহায়ক হবে।”
আজিজুলের মতোই মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বড়জোড়ার প্রশান্ত মিত। পরিবারে চরম অনটন। বাবা দিলীপ মিত বড়জোড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফুটপাথে রেডিমেড পোশাক বিক্রি করেন। প্রতিদিন মেরেকেটে ১০০ টাকা রোজগার। প্রশান্তকে প্রায়ই বাবার সঙ্গে দোকানে বসতে হয়। এ বার মাধ্যমিকে ৬৩০ নম্বর পাওয়া বড়জোড়া হাইস্কুলের এই কৃতী ছাত্র ডাক্তার হতে চায়। সেই লক্ষ্যে প্রধান বাধা দারিদ্র। পরিবারও আর তাকে পড়াতে চায় না। পরিবারের মুখ চেয়ে প্রশান্ত কিছু বলতেও পারছে না। দিলীপবাবু বলেন, “কী ভাবে ওকে আর পড়াবো? নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার।” প্রশান্তর মা মিনুদেবীর কথায়, “উচ্চ শিক্ষার খরচ অনেক বেশি। আমরা চালাতে পারব না।” বড়জোড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওর ভবিষ্যৎ উজ্বল। তবে দারিদ্রের কারণে ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। আমরা ওর পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।” |