ছেলেমেয়েদের দুর্দান্ত ফলে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন বাবা-মায়েরা। ছেলেমেয়ের স্বপ্ন যে অনেক দূর! বিজ্ঞান নিয়ে তিন কৃতীই যে অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু পরিবারের দারিদ্রই এখন যেন কাঁটা হয়ে উঠেছে তাদের স্বপ্নপূরণের।
আদ্রার বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের রাহুল দাস এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮৫.৭১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে ৯১ শতাংশ নম্বর পেয়ে আদ্রার পলাশকোলার বাসিন্দা রাহুল উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে চায়। কিন্তু তার বাবা শুভাশিস দাসের ফুটপাথে বসে জুতো সেলাই করে যা আয় হয়, তাতে ঊচ্চশিক্ষা রাহুলের কাছে অসম্ভব। এমনটাই মনে করছেন শুভাশিসবাবু। তাঁর দুশ্চিন্তা, “ছেলে জানিয়েছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু শুনেছি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ অনেক। বুঝতে পারছি না কোথা থেকে ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় করব?” রাহুলের কথায়, “আমি বিজ্ঞান নিয়ে যতদূর সম্ভব পড়া চালিয়ে যেতে চাই। স্বনির্ভর হয়ে বাবা-মাকে একটু ভাল রাখতে চাই। সম্ভব হলে আমার মতো গরিব ছেলেমেয়েদের পাশেও দাঁড়াব। অনেক কিছুই করার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু জানি না, সে সব আদৌ সম্ভব হবে কি না।” |
একই সমস্যায় পড়েছে বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের দ্বিতীয় স্থান দখল করা ছাত্রী মৌমিতা দাসের পরিবারও। তার বাবা সুশান্ত দাস পেশায় খবরের কাগজ বিক্রেতা। রাহুলের চেয়ে দু’নম্বর কম পেয়ে মৌমিতা ৮৫.৪২ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। রাহুলদের পাশেই তাদের বাড়ি। মৌমিতা বলে, “বিজ্ঞান নিয়েই উচ্চমাধ্যমিকে পড়তে চাই। স্কুল থেকে রাহুলের সঙ্গে আমাকেও শিক্ষকরা এত দিন যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। কিন্তু আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় অন্য স্কুলে পড়তে যেতে হবে।” দুই কৃতির পরিবারই তাই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
আদ্রার নিগমনগর আশ্রম স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক প্রিয়াঙ্কা আচার্য মাধ্যমিকে পেয়েছে ৮০.৭১ শতাংশ। বিজ্ঞানের বিভাগগুলিতে গড়ে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে সেও চায় বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে। কিন্তু বাধ সেধেছে পরিবারের অনটন। তার বাবা অনিত আচার্য পৌরহিত্য করে সংসার চালান। সেই আয়ে মেয়ের ইচ্ছে কী ভাবে পূরণ করবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। অনিতবাবু বলেন, “কোনওমতে মাধ্যমিক পড়ানোর খরচ জোগাড় করেছি। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার বিশাল খরচ কী ভাবে জোগাড় করব ভেবে পাচ্ছি না। মেয়ের এই সাফল্য দেখার পর থেকেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছি।” তবে ইতিমধ্যেই আশার কথা শুনিয়েছেন প্রিয়াঙ্কার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “প্রিয়াঙ্কা আমাদের স্কুল থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পড়বে। প্রিয়াঙ্কা বরাবারই ভালো ফল করে আসছে। তাই ওকে পড়াশোনায় যথাসাধ্য সাহায্য করতে আমরা চেষ্টা করেছি।” প্রিয়াঙ্কাও জানায়, ওর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে স্কুলের শিক্ষকদের অবদান। |