পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র তোলার প্রথম দিনেই বিষ্ণুপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় গণ্ডগোল বাধল। বিষ্ণুপুর, ইন্দাস, জয়পুর ও পাত্রসায়রে সিপিএমের প্রার্থীদের ব্লক অফিসে যাওয়া আটকাতে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসক তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার সময়ে পুলিশকে ডেকেও সাহায্য পাওয়া যায়নি বলে সিপিএমের অভিযোগ।
বুধবার থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র তোলা শুরু হয়েছে। এ দিন সকাল এগারোটায় বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসে যাওয়া পথে স্থানীয় ভড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান তথা বাঁকুড়া আদালতের প্রাক্তন পাবলিক প্রসিকিউটর সুরজিৎ মণ্ডল এবং দলের কৃষকসভার বর্ষিয়ান নেতা তপন দত্তকে তৃণমূলের লোকেরা লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। মনোনয়ন পত্র তুলতে না পেরে তাঁরা নিজেরাই বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। সুরজিৎবাবুর বাঁ কান কেটে গিয়ে রক্ত ঝরছিল। দু’জনেরই কোমর, পিঠে ও মাথায় আঘাত রয়েছে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে। সুরজিৎবাবুর অভিযোগ, “দলের প্রার্থীদের জন্য মনোনয়ন পত্র তুলতে মোটরবাইকে যাচ্ছিলাম। ব্লক অফিসের কিছুটা আগে তৃণমূলের কর্মীরা রাস্তা আটকে আমাদের লাঠি নিয়ে বেধড়ক মারধর করল।” |
দু’জনকেই পরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বেলা ১২টায় বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসে গিয়ে দেখা গেল, সদর দরজার সামনে বেশ কিছু পুলিশ কর্মী মোতায়েন রয়েছেন। যাঁরা জমায়েত করে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই তৃণমূলের চেনামুখ। সেখান থেকে ফেরার পথে প্রায় ২০০ ফুট দূরে দেখা গেল তৃণমূলের কর্মীরা রাস্তার পাশে জড়ো হয়ে রয়েছেন। ব্লক অফিসের দিকে কোনও অচেনা লোক এগোলেই তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশপাশে অবশ্য পুলিশ কর্মীদের দেখা মেলেনি। সন্ধ্যায় বিডিও (বিষ্ণুপুর) প্রশান্তকুমার মাহাতো জানান, এ দিন কোনও দলই মনোনয়ন পত্র তোলেনি।
সিপিএমের গেছো সংসদের প্রার্থী উজ্জ্বলা মাঝি, হটনগর সংসদের প্রার্থী সমর মাঝি, জোতবিহার সংসদের প্রার্থী বিজলা মাঝি এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী বংশী মাঝিকে নিয়ে দলের ইন্দাস জোনাল কমিটির সদস্য বাসুদেব রায় ব্লক অফিসে একটি গাড়িতে যাচ্ছিলেন। ইন্দাসে তাঁদের রাস্তা আটকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। ইন্দাসের জোনাল সম্পাদক অসীম দাসের অভিযোগ, “তৃণমূলের কর্মীদের মারে পাঁচ জনেই আহত হন। বাসুদেববাবুকে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার সময় পুলিশকে ডেকেও সাহায্য পাওয়া যায়নি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের অভিযোগ, “মঙ্গলবার রাতে জয়পুরেও দলের এক প্রার্থীকে মারধর করে তৃণমূলের লোকেরা। জেলার প্রায় সর্বত্র ওরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরছে। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” |
বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “আমাদের দলের কর্মীরা কোথাও সিপিএমের প্রার্থীদের বাধা দেয়নি। বিষ্ণুপুরে সিপিএমেরই যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয়েছে বলে শুনেছি।” প্রশাসন সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুর ও জয়পুরে কোনও দল এ দিন মনোনয়ন পত্র না তুললেও সোনামুখী, ইন্দাস ও পাত্রসায়রে অনেকেই মনোনয়ন পত্র তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে সিপিএমেরও অনেকে রয়েছেন। সারা জেলায় এ দিন পঞ্চায়েতের ৩১৫টি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৫টি ও জেলা পরিষদের একটি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে।
বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অদীপকুমার রায় বলেন, “বিষ্ণুপুর ও ইন্দাসে দু’টি গোলমালের ঘটনার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। সবগুলিই বিডিও অফিসের বাইরে ঘটেছে বলে অভিযোগ। তবুও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ইন্দাস ও বিষ্ণুপুরে ঝামেলা হয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। থানাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, জেলায় একটি মনিটরিং কমপ্লেন সেল গড়া হয়েছে। প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা করতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়লে ফোন করে ওই সেলকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফোন নম্বরটি শীঘ্রই তাঁরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করবেন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “যাঁরা মনোনয়ন জমা করতে আসবেন, তাঁদের সাহায্য করার জন্য ব্লকে ব্লকে ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ২২টি মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে। |