নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া আর ভরা কোটাল। দ্বিমুখী আক্রমণে নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের চারটি ব্লক। নোনাজলে যেমন ক্ষতি হয়েছে কৃষি জমির তেমনই ক্ষতি হয়েছে পান বরজের। ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষেরও। এই অবস্থায় গত চারদিন ধরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সব এলাকার মানুষজন।
মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাতে পূর্ণিমার ভরা কোটালে জলের চাপে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপের নদী ও সমুদ্র লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের। ২০০৯ সালের মে মাসে আয়লার তাণ্ডবে সুন্দরবন এলাকার এই সব অঞ্চলের নদী ও সমুদ্রবাঁধ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই সব ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ আর সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ। বাঁধ মেরামতির জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বার বার নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সেচ দফতর সংস্কারের কাজে হাত লাগায়নি। |
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার হাত বদল ঘটে। আয়লাদুর্গত ওই এলাকায় বাঁধ মেরামতি ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু তার পর দু’বছরেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সপ্তমুখী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে পাথরপ্রতিমার ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতের বাসবখালি বামনপাড়া, ভাগবৎপুর গ্রাম। ওয়ার্লস ক্লিক নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে দক্ষিণ লক্ষ্মীনারায়ণপুরে। বেশ কিছু জায়গায় সমুদ্র বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। এ দিকে গত চারদিন ধরে জল ঢুকে ঘরবাড়ি, চাষের ক্ষতি হলেও এখনও দুর্গত এলাকায় সরকারি ভাবে কোনও ত্রাণ পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গতরা।
সাগরের মুড়িগঙ্গা, হুগলি নদী ও বঙ্গোপসাগরের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ঘোড়ামারা, বোটখালি, বেগুয়াখালি, বামনখালি, সুমতিনগর-সহ বিভিন্ন এলাকা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীবাঁধ কোথাও ভেঙেছে আবার কোথাও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই অবস্থা নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতের বালিয়াড়া, বাগডাঙা গ্রামে সমুদ্রবাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। মুড়িগঙ্গার বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে নারায়ণগঞ্জ, মদনগঞ্জ এলাকায়। নারায়ণগঞ্জ গ্রামের ৪০টি পরিবার স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, “সব ব্লকেই ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীবাঁধগুলির অবস্থা সরেজমিন দেখতে পঞ্চায়েত সমিতিকে বলা হয়েছে। সেচ দফতর বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ মেরামত করলেও কিছু কিছু জায়গায় কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরবন এলাকায় ইতিমধ্যে ২০০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। হঠাৎ নিম্নচাপের কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।” উল্লেখ্য, আয়লার পর সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকের সাড়ে তিন হাজার নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। |