ফের নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল কাকদ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা। গত কয়েকদিন ধরেই একটু একটু করে পাড় ভাঙছিল গোবদিয়া নদীর। সোমবার রাত থেকে হঠাত্ই ভাঙন বেড়ে যায়। বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের উত্তর কাশিয়াবাদ, মাঝেরচক-সহ বেশ কিছু গ্রাম।
কোথাও মানুষ সমান আবার কোথাও কোমর সমান নোনা জল জমে গিয়েছে। একশোরও বেশি পুকুর ভেসে গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছচাষের। বহু জায়গাতেই মাছ মরে ভেসে উঠে দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। নষ্ট হয়েছে বেশ কিছু পানবরজ। ঘরে জল ঢোকায় হাজার খানেক পরিবার বিপন্ন হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্র, চাল-ডাল নষ্ট হয়ে গিয়ে খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে পরিবারগুলি। কিন্তু কেউই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারছেন না কারণ তাঁরা চলে গেলেও ঘরে থাকা গরু-ছাগল কোথায় রাখবেন তা নিয়েই চিন্তিত তারা। পাশাপাশি চুরি-ডাকাতির ভয়ও রয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, জল নেমে গেলে ঘরবাড়িগুলি ভেঙে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিরাশ্রয় হয়ে পড়বেন। তাঁদের অভিযোগ, বাঁধ ভেঙে তাঁদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়লেও প্রসাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরঅস্ত। কোনও সাড়াশব্দই নেই। |
ঘরে জল ঢোকায় গ্রামের উঁচু ইটের রাস্তায় পরিবার নিয়ে উঠে এসেছেন জানকী হালদার ও কালীদাসী হালদার। তাঁদের অভিযোগ, ঘরের ধান-চাল, জ্বালানি সবই জলের তলায়। দিনভর নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। একটা ত্রিপলও জোটেনি। বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে পরিবার নিয়ে ভিজতে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের সুচিত্রা জানা বলেন, ‘‘ভাঙনে বিপন্ন ওই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখে বিডিওকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দেব।” কাকদ্বীপের বিডিও অভিজিত্ চৌধুরী বলেন, “প্লাবিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে এলাকায় লোকজন পাঠানো হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “ওই এলাকায় নদীবাঁধের বিপজ্জনক অবস্থার কথা জানিয়ে সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে বার বার বলা হলেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরা বলেন, “ওই এলাকায় সিপিএমের যিনি পঞ্চায়েত প্রধান আছেন, তিনি ১০০ দিনের প্রকল্পে বাঁধে মাঠি ফেলার কোনও কাজ করেননি। ফলে এই অবস্থা হয়েছে।”
তবে একই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, পূর্ণিমার ভরা কোটালে জলস্ফীতির কারণে গোটা সুন্দরবন এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় নদী ও সমুদ্রের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। ওই সব বাঁধ মেরামতির ক্ষেত্রে দ্রুত নিদেশ দেওয়া হয়েছে।” |