আরে, এ তো চেন্নাইয়ের কমিশন,
কীসের নিরপেক্ষতা
কোটি কোটি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীর চোখে এ ভাবে ধুলো দেওয়া যায়! ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের একেবারে মাথায় যিনি বসে, তিনি তো তা-ই করে চলেছেন। সাহেবদের ভাষায় যাকে বলে ‘কমপ্লিট আইওয়াশ’।
সাম্প্রতিক স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করাটাও তো একই ব্যাপার। ‘কমপ্লিট আইওয়াশ’।
তিন দিন আগে এই শহরেই বসে সারা দেশের সাংবাদিকদের সামনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এন শ্রীনিবাসন বলে গেলেন, “বোর্ড একটা তদন্ত কমিশন গঠন করবে। বোর্ডের পদাধিকারীদের মধ্যে দু’জন ও এক জন নিরপেক্ষ সদস্য থাকবেন এই কমিশনে। তবে কমিশনের সদস্য বাছাই বা কাজের ব্যাপারে আমি কোনও নাক গলাব না।” সেই কমিশন তৈরি হল ঠিকই। তবে তাতে বোর্ডের দু’জন নন, এক জন সদস্য রয়েছেন, তিনি সচিব সঞ্জয় জাগদালে। বাকি দু’জন, দুই প্রাক্তন বিচারপতি জাস্টিস টি জয়রাম চৌতা এবং জাস্টিস আর বালসুব্রহ্মণ্যম।
ফিক্সিং কেলেঙ্কারির ঘটনাচক্র, শ্রীনিবাসনের বক্তব্য এবং সব শেষে এই তদন্ত কমিশন গঠন এ সব দেখে আমার মাথায় বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, যেগুলোর সঠিক উত্তর না খুঁজে পেলে ভারতীয় ক্রিকেটের ক্ষতির কোনও শেষ থাকবে না।
প্রথম এবং অবধারিত প্রশ্ন হল, এই কমিশন কতটা যথাযথ? দু’জন বিচারপতিকে হয়তো রাখা হয়েছে কমিশনের নিরপেক্ষতার ভাগটুকু যাতে বেশি থাকে, সে জন্য। ব্যাপারটা এ পর্যন্ত হলে তা মেনে নিতাম। কিন্তু দুই বিচারপতিই তো চেন্নাইবাসী! যিনি অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, সেই গুরুনাথ মায়াপ্পনও যেমন চেন্নাইবাসী, তেমন তাঁর শ্বশুর তথা বোর্ড প্রধানের শহরও চেন্নাই।

মিডিয়ার ঘেরাটোপে শ্রীনিবাসন। বুধবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই

শ্রীনির দিকে টাটকা তিন তির

ভারতীয় ক্রিকেটটাই যেখানে ইদানীং প্রচণ্ড ভাবে চেন্নাইকেন্দ্রিক, সেখানে এ দেশের ক্রিকেটের কলঙ্কমোচনের দায়িত্ব দেওয়া হল যাঁদের, তাঁরাও চেন্নাইয়েরই বাসিন্দা! এটা তো চেন্নাইয়ের কমিশন! কীসের নিরপেক্ষতা আছে এতে? কমিশনের জন্মের সময়েই নিরপেক্ষতার প্রথম শর্তটাকেই উধাও করে দেওয়া হল! এই কমিশন শেষ পর্যন্ত মূষিক প্রসব করলেও অবাক হব না এবং সেই সম্ভাবনাটাই বেশি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে, এই কমিশন গঠনে শ্রীনিবাসনের কোনও ভূমিকা নেই।
প্রশ্ন আরও আছে। এই কমিশনের ক্ষমতা কতটা? পুলিশের তদন্তে যে তথ্য আর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ছবিটা খুব একটা অস্পষ্ট নয়। পুলিশ এ পর্যন্ত যতটা এগিয়েছে, তাতে গুরুনাথের পদ নিয়ে তেমন কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। কমিশনের সদস্যরা কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন? শ্রীনিবাসনকে? তিনি তো কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকেই শুনিয়ে রেখেছেন, “আমাকে কেন প্রশ্ন করা হবে? আমি কি কোনও অপরাধ করেছি?” তা হলে কমিশনের সদস্যরা কাদের ডাকবেন? গুরুনাথ যে শুধু ক্রিকেটপ্রেমী নন, তিনি চেন্নাই সুপারকিংসের টিম প্রিন্সিপাল এবং অন্যতম মালিক, তা প্রমাণ করার জন্য একাধিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেছে পুলিশ। সেই কাগজপত্রগুলো বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটির সামনে পেশ করলেই তো এর ফয়সালা হয়ে যাবে। এ জন্য কমিশনের কী দরকার?
আসলে এ সব কমিশন-টমিশন করে নিজেকে লড়াইয়ের জন্য গুছিয়ে নিতে আরও সময় নিয়ে নিচ্ছেন শ্রীনিবাসন। এটা ‘ডিলে ট্যাকটিক্স’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত বহু লোকের মুখে কুলুপ এঁটে দেওয়ার ফন্দিটাও মন্দ নয়। অনিল কুম্বলে, জাভাগল শ্রীনাথদের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার, যাঁরা এখন ক্রিকেটের প্রশাসনেও রয়েছেন, তাঁরা কেন চুপ করে বসে আছেন? রঞ্জিব বিসওয়ালকে ভারতীয় দলের ম্যানেজার করে ইংল্যান্ডে পাঠানোর মধ্যেও এমনটাই চাল রয়েছে বলে আমার ধারণা।
আসলে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ দেশের ক্রিকেটকে এমন ভাবে কাবু করে রেখেছে যে, তাতে ক্রিকেটের স্বার্থ বলে কিছুই আর বেঁচে নেই। এটাই এখন ‘সিস্টেম’ এবং বোর্ডের তদন্ত কমিশন এই ‘সিস্টেম’-এরই ফল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.