স্পট-ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া যাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও না পড়ে, সে জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়ল ভারতীয় বোর্ড। ৬ থেকে ২৩ জুন ইংল্যান্ডে হতে চলা এই টুর্নামেন্টে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলকে নজিরবিহীন ভাবে ধরিয়ে দেওয়া হল ‘কী করবেন-কী করবেন না’-র তালিকা।
কী কী রয়েছে সেই তালিকায়?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের টিম ম্যানেজার রঞ্জীব বিসওয়ালকে বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই যেন ক্রিকেটারদের হোটেল ছেড়ে বেরোনোর অনুমতি না দেওয়া
হয়। বাইরে ডিনারে যেতে চাইলেও টিম ম্যানেজারের কাছে আগে
থেকে ‘আবেদন’ জমা দিতে হবে। বাইরের কোনও ফোনও ধরতে পারবেন না ক্রিকেটাররা।
এই নিষেধাজ্ঞা জারির ২৪ ঘণ্টা আগেই ধোনি স্পট-ফিক্সিং নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে তাঁকে আটকে দিয়েছিলেন ম্যানেজার বিসওয়াল। এ জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারত অধিনায়ক। মনিন্দর সিংহ বলছেন, “মনে হয় খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরে ধোনি এই সাংবাদিক সম্মেলনটা নিয়ে খুব আফসোস করবে।” আর কীর্তি আজাদের
কথায়, “ধোনির নীরবতা খুবই অর্থপূর্ণ। কিছু না বলেই যেন অনেক কিছু বলে দিয়েছে ও।”
সুনীল গাওস্কর অবশ্য বোর্ডের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। তিনি বলছেন, “বিতর্ক না তুলে আমাদের উচিত একটু ধৈর্য ধরা। কমিশন তার কাজ করুক।” বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন লালুপ্রসাদও। তিনি এ দিন বলেন, “শ্রীনিবাসন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেননি। তাই ওঁর পদত্যাগের দাবি ওঠার কথা নয়।”
ভি ভি এস লক্ষ্মণও দাবি করেছেন, কিছু অসৎ ক্রিকেটারের জন্য গোটা ক্রিকেটের বদনাম করা উচিত নয়। লক্ষ্মণ বলেন, “আমি নিশ্চিত, শীঘ্রই বিষয়টি মিটে যাবে। ক্রিকেট তার হারানো মহিমা ফিরে পাবে।” ক্রিকেটীয়-রাজনৈতিক সমর্থন পেলেও বোর্ড প্রেসিডেন্টের জন্য এ দিন খারাপ খবরও ছিল। মুম্বই আদালত তাঁর জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পনের পুলিশি হেফাজত ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল। বিন্দু দারা সিংহ এবং চেন্নাইয়ের হোটেল ব্যবসায়ী বিক্রম অগ্রবালের সঙ্গে তাঁকে জেরা করা হবে বলেই এই সিদ্ধান্ত। মুম্বই পুলিশের বক্তব্য, ফোনে বেটিং সংক্রান্ত খবর দেওয়া নেওয়ার সময় সাঙ্কেতিক ভাষায় কথা বলতেন বিন্দু এবং গুরুনাথ।
এ দিন স্পট-ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দিল্লি থেকে গ্রেফতার হলেন আরও ৪ জন। যাঁদের এক জন, অভিষেক শুক্ল শ্রীসন্তের বন্ধু। অভিযোগ, শ্রীসন্ত গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিষেককে ফোন করে তাঁর ঘর ‘পরিষ্কার’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বুকি জিজু।
গ্রেফতার হওয়া বাকি তিন জন, ভিকি চৌধুরি, নীতিন জৈন এবং বিনোদ শর্মার যোগাযোগ ছিল আর এক অভিযুক্ত চান্ডিলার সঙ্গে।
পাকিস্তানি আম্পায়ার আসাদ রাউফ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ এ দিন অস্বীকার করেছেন। রাউফ বলেছেন, “ম্যাচ গড়াপেটা, স্পট-ফিক্সিং, বুকিদের কাছ থেকে উপহার বা বেআইনি টাকা নেওয়ার অভিযোগ আমি তীব্র ভাবে অস্বীকার করছি। আইসিসি-র দুর্নীতিদমন শাখা তদন্ত করলে আমি জেরায় হাজির থাকতে তৈরি।”
গত দু’সপ্তাহে গড়াপেটার বিষয় শিরোনামে উঠে আসার পাশাপাশি দাবি উঠেছে গড়াপেটা নিয়ে আলাদা আইন পাশ করার। তবে আইন মন্ত্রকের পাঠানো ‘ডিসঅনেস্ট প্র্যাক্টিস ইন স্পোর্টিং ইভেন্ট (প্রিভেনশন)’ বিলের প্রথম খসড়া এ দিন বাতিল করে দিল ক্রীড়া মন্ত্রক। আঠারোটা সংশোধনী দিয়ে তা আইন মন্ত্রকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গড়াপেটা নিয়ে আদৌ কোনও বিশেষ আইন পাশ হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।
|
তিহাড়ে ঘুম নেই শ্রীসন্তের
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
কেমন কাটল নতুন বাইশ গজে শ্রীসন্তের প্রথম রাত? মসৃণ সবুজ ঘাস নয়, এখানে তাঁর চারপাশে কংক্রিটের দেওয়াল। তিহাড় জেলের কুঠুরিতে শ্রীসন্ত জীবনের প্রথম রাত কাটালেন না ঘুমিয়েই। নিয়মিত পাঁচতারা হোটেলে থাকা ভারতীয় পেসারের খাবারের তালিকায় ছিল শুধুই ডাল-ভাত। আর তা-ও খেতে হল জেলের আর পাঁচ জন সাধারণ কয়েদির সঙ্গে। “জেলে ঢোকার সময় শ্রীসন্তকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। খুব একটা কথা বলেনি। রাতে চুপচাপ বসে ছিল, আর না হলে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছিল। প্রায় ঘুমোয়ইনি,” তিহাড় জেলের এক কর্তা এ দিন বলেন। তাঁর আরও সংযোজন, “রাতে খাওয়ার সময় বাকিদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ডাল-ভাত নিল। আর সকালে চায়ের সঙ্গে কয়েকটা বিস্কুট।” ২৮ মে শ্রীসন্ত এবং অজিত চান্ডিলা-কে জেল হেফাজতে পাঠায় আদালত। স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডের তৃতীয় অভিযুক্ত অঙ্কিত চহ্বাণ ইতিমধ্যেই জেলে রয়েছেন। তিহাড় জেলেই আলাদা আলাদা বিভাগে রাখা হয়েছে তিন জনকে। |