শুরু মনোনয়ন-পর্ব |
বিরোধী প্রার্থীদের বাধা, নির্বিঘ্ন হল না প্রথম দিন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মনোনয়ন-পর্ব শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরে। বুধবার, প্রথম দিন অবশ্য নির্বিঘ্নে কাটল না। খড়্গপুর, দাঁতন, মোহনপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএমের একদা শক্ত দুই ঘাঁটি কেশপুর ও গড়বেতায় এ দিন কোনও দলই মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র তোলেননি, টাকাও জমা দেননি!
গোলমাল পাকানোর অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধেই। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা ব্লক অফিসের সামনে জমায়েত করে বিরোধীরদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিচ্ছে। যদিও তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে বলেন, “কোথাও বাধা দেওয়া হয়নি। সকলেই মনোনয়ন দিয়েছেন।” |
|
খড়্গপুর ২ ব্লকে মনোনয়ন জমা তৃণমূল প্রার্থীদের |
এ দিন কেশপুরে মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। তাঁদের বিডিও অফিস থেকে জোর করে তুলে নিয়ে এসে আইএনটিটিইউসি-র অফিসে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আইএনটিটিইউসি অফিসে বসিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যেন মনোনয়ন না জমা দিই।” যদিও কেশপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, “এরকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি।” কেশপুরের বিডিও জামিল আখতার বলেন, “এদিন কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি। কেউ আবেদনপত্রও সংগ্রহ করেননি।”
অন্যদিকে, খড়্গপুর-২ ব্লকে সিপিএম মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন সিপিএমের মাদপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক কামের আলি। তাঁর কথায়, “প্রথমের দিকে যে কয়েকজন মনোনয়ন জমা দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা দিতে পেরেছেন। পরে ৭ জন মনোনয়ন জমা দিতে যান। বিডিও অফিসের কাছে তৃণমূলের জমায়েত থাকায় তাঁরা যেতে পারেননি।” |
|
মেদিনীপুর সদর ব্লকে মনোনয়ন জমা কংগ্রেস প্রার্থীদের |
গণ্ডগোল হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাঁতন ২ পঞ্চায়েত সমিতির সম্ভাব্য প্রার্থী সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ খাটুয়াকে মারধর ও বাড়িতে ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাতে তালদা গ্রামে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপিএমের দাঁতন ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক আবদুল রহিম বলেন, “খণ্ডরুই লোকাল কমিটির সদস্য তালদা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবুকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করার জন্য দলে সিদ্ধান্ত হয়। এ দিন গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে তৃণমূলের লোকজন লাঠি দিয়ে মারধর করে। তারপর অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় হাইস্কুলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর মনোনয়নপত্র জমা দিলে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। বিশ্বজিৎবাবুর বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দিলে বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেয় তৃণমূলের লোকেরা।” প্রার্থীর সমর্থনে বাড়িতে বৈঠক করায় হুমকি দেওয়া হয় দলীয় সমর্থক শ্যামল হেমব্রমকেও। গোটা বিষয়টি ফ্যাক্স মারফত নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলে দাবি জোনাল কমিটির সম্পাদকের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শৈবাল গিরি বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন না থাকায় ভোটের আগে মিথ্যা অভিযোগ করে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে সিপিএম।”
মোহনপুর ব্লকেও একই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের মোহনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক রমণীকান্ত জানার অভিযোগ, “গোমুন্ডার প্রার্থী প্রভাস জানাকে ব্লকে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মোহনপুরের প্রার্থী গণেশ রানাকে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” |
|
মেদিনীপুর সদর ব্লক অফিসে কড়া পুলিশি প্রহরা |
এ দিন সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনে ও পঞ্চায়েত সমিতির ৪টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। তার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫টি প্রতীকে ২টি নির্দল ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩টি প্রতীকে একটি নির্দল। মাদপুরের তৃণমূল নেতা অজিত মাইতি বলেন, ‘‘আমরা যদি বাধা দিতাম তাহলে সিপিএম কিভাবে এতগুলি আসনে মনোনয়ন দিল। পরিকল্পনা করে কুৎসা রটানোর উদ্দেশেই এই অপ্রপ্রচার করা হচ্ছে।” বিডিও সোমা দাস বলেন, “মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে কোনও অভিযোগ পাইনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নির্দল মিলিয়ে এ দিন ৪০ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।” যার মধ্যে ৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ও ১০টি পঞ্চায়েত সমিতিতে।
ঘাটাল ও চন্দ্রকোনাতেও দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। অন্যদিকে নারায়ণগড়ে তিনটের পরও মনোনয়ন নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। যদিও নারায়ণগড়ের জয়েন্ট বিডিও অনির্বাণ মজুমদার বলেন, “মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে টাকা জমা দেওয়ার জন্য লম্বা লাইন ছিল। যাঁরা তিনটের মধ্যে লাইনে ছিলেন তাঁদেরই মনোনয়ন জমা নেওয়া বা ফি নেওয়া হয়েছে।” এদিন নারায়ণগড়ে ২৪ টি (১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ৫টি পঞ্চায়েত সমিতি) মনোনয়ন জমা পড়েছে। ১৩০ জন টাকা জমা দিয়েছেন। তবে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কোথাও বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|