হাওড়া জুড়ে অস্ত্রের রমরমা কারবার, জানতই না পুলিশ
কী নেই সেখানে?
দেশি রিভলভার থেকে মুঙ্গেরের তৈরি সেভেন এমএম, নাইন এমএম থেকে একনলা বন্দুক। রয়েছে নানা জাতের বোমা ও বোমার মশলাও। ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দক্ষিণা ফেললেই এ সব অস্ত্র হাতের মুঠোয়!
মুঙ্গের বা বনগাঁর মতো প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকা নয়। অস্ত্র কেনাবেচার এমন রমরমা কারবার প্রকাশ্যে চলছে খাস হাওড়া শহরের বুকে। অথচ, মঙ্গলবার সুদূর দিল্লি থেকে আসা পুলিশের দল বাঁকড়ার খাঁ পাড়ায় হানা না দিলে তা জানাই যেত না। কারণ এই অস্ত্র-কারবারের খবরই ছিল না এখানকার পুলিশের কাছে। অন্তত তেমনটাই তাদের দাবি। আর এই ঘটনাতেই ফের প্রশ্নের মুখে হাওড়ার পুলিশি নজরদারি।
হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের যেমন বক্তব্য, তারা জানতই না তাদেরই এলাকায় গত চার মাস ধরে ডেরা বেঁধেছে অস্ত্র তৈরির কারবারিরা। টনক নড়েছে মঙ্গলবার। কারণ খাঁ পাড়ায় সন্ধান মিলেছে চার-চারটি অস্ত্র তৈরির কারখানার। উদ্ধার হয়েছে কয়েক বস্তা অস্ত্র-সহ অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ। জানা গিয়েছে, অস্ত্র কারখানার মূল লিঙ্কম্যান বাঁকড়ারই বাসিন্দা। তাঁর সন্ধান অবশ্য বুধবারও পুলিশ করে উঠতে পারেনি। তবে তদন্তে জানা গিয়েছে, হাওড়া জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই অস্ত্র পাচারকারীদের জাল।
বুধবার খাস হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকাতেই দেখা মিলল অস্ত্র বিক্রি ও তৈরির এমনই এক গোপন আস্তানার। দশ বাই বারো ফুটের আধো অন্ধকার সেই ঘরে ঢুকলেই নাকে লাগে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। চার দিকে ছড়িয়ে নানা মাপের রিভলভার, পাইপগান, বন্দুক, বোমা। ঘরের মধ্যে যাঁরা ছিলেন, সকলেরই মুখে গামছা বাঁধা। কয়েক জন ব্যস্ত বোমা বানাতে। সকলেই কথা বলছিলেন হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে।
হাওড়ার এক গোপন ডেরায় এ ভাবেই বোমা-বন্দুক
তৈরির কাজ চলে সারা বছর। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ওই ব্যক্তিরাই জানালেন, সারা বছর ধরেই অস্ত্র তৈরি ও বিক্রির এই কারবার চলে হাওড়ায়। বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র আসে রেল ও সড়কপথে। হাওড়া স্টেশনে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় ‘মাল’ নামানো হয় আগের কোনও স্টেশনে। হাওড়া স্টেশনে বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র ঢোকে পেট্রাপোল দিয়ে। ভোটের সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বাড়াতে হয়। এর জন্য বেশি লোকও আনতে হয় ভিন্ রাজ্য থেকে।
কী দামে বিক্রি হয় অস্ত্র? অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দাবি, অস্ত্রের দাম নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে। যেমন সাধারণ ভাবে একটা ওয়ান-শটারের দাম নেওয়া হয় তিন-চার হাজার টাকা। ভোটের সময়ে তা বেড়ে হয় পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। ‘ছক্কা’ বা রিভলভারের দাম হয় সাত থেকে ১০ হাজার টাকা। ভোটের সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ থেকে ১৫ হাজার। আবার এমনিতে ২২-২৪ হাজার টাকার সেভেন এমএম পিস্তলের দাম ভোটের সময়ে বেড়ে হয় ৩০ হাজার টাকা। নাইন এমএমের দাম ২৫-২৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়।
ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই জানালেন, বিভিন্ন মানের ও মাপের বোমাও তৈরি করে বিক্রি করা হয় ‘অর্ডার’ পেলে। বোমা মেলে ৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। যেমন কৌটো বোমা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। আবার হরলিক্সের বোতলে তৈরি বোমা বেশি শক্তিশালী হওয়ায় তার দাম হয় ৫০০ টাকা। এই বোমায় বড় বাড়িও ধসিয়ে দেওয়া যাবে বলে ওই কারবারিদের দাবি।
এর পরেও অবশ্য অস্ত্র বিক্রির ঘটনা মানতে নারাজ হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি নিশাত পারভেজ। তিনি বলেন, “হাওড়া শহরে এই ধরনের অস্ত্র কেনাবেচা হচ্ছে বলে আমরা জানি না। জানতে পারলেই নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.