|
|
|
|
দু’দশকের শীতলতম মে |
নিম্নচাপের জেরে আগাম বর্ষার আশা উত্তর-পূর্বে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাংলাদেশের দিকে সরে গেল বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ! এবং তার জেরেই মায়ানমারে থাকা মৌসুমি বায়ু নির্দিষ্ট দিনের আগেই উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢুকে পড়তে পারে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, নিম্নচাপটি আরও কয়েক দিন বাংলাদেশ উপকূলে স্থায়ী হলে আগামী শনিবারের মধ্যে উত্তরবঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে বর্ষা।
পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা কেমন হবে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত অথবা নিম্নচাপ। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, বর্ষা নির্দিষ্ট সময়ে ঢুকলেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ জুন ও জুলাই মাসে তেমন বৃষ্টি পায়নি। কারণ, ওই দুই মাস বঙ্গোপসাগরে তেমন নিম্নচাপ কিংবা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়নি। তবে এ বছর মে মাসের গোড়া থেকেই বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। তার জেরেই এ বার তাপমাত্রা তেমন বাড়েনি। এক আবহবিদের কথায়, “মে মাসে এ বার যত ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে, তা গত ২০ বছরে দেখা যায়নি।” এই পরিস্থিতি আরও দিন ১৫ চললে জুন মাসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ভাল পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপটি আর শক্তি বাড়ায়নি। বরং সরে গিয়েছে বাংলাদেশের দিকে। এই নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাবে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন। এর ফলেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বর্ষা ১ জুনের আগেই ঢুকে যেতে পারে
বলে আবহবিদদের একাংশের অভিমত। সে কারণেই নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতির উপরে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন তাঁরা।
ওই নিম্নচাপটির ফলে এ রাজ্য আর কতটা বৃষ্টি পাবে? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিন দুয়েক বৃষ্টি হবে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হবে উত্তরবঙ্গেও। রাতে ও সকালের দিকে বৃষ্টির দাপট তুলনায় বেশি থাকবে।” মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সারা দিন ধরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি তাপমাত্রা যেমন বাড়েনি, তেমন আবহাওয়াও অস্বস্তিকর হয়ে ওঠেনি।
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, গত বছর বর্ষা এসেছিল দেরিতে। এপ্রিল-মে মাসে তেমন বৃষ্টিও হয়নি। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। মৌসম ভবনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরই মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছিল। এ বছর অবশ্য ১ মার্চ থেকে ২২ মে পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। কৃষি-আবহবিদেরা বলছেন, প্রাক-বর্ষায় (চলতি কথায় গ্রীষ্মকাল) ভাল পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় বোরো ধান ও পাট চাষের সুবিধা হয়েছে। বর্ষার সময়ও এর সুফল মিলবে বলে তাঁদের আশা।
কিন্তু আবহাওয়ায় এই বদল কেন? গোকুলবাবু জানান, মে মাসে গরমের চরিত্র বদলের জন্য দায়ী উত্তর ভারত থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। এর সঙ্গে জুড়েছিল বিহার-ঝাড়খণ্ডের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্ত-ও। গোকুলবাবু বলছেন, অন্যান্য বার গরম কালে নিম্নচাপ অক্ষরেখা বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেও তা দিন কয়েক পরেই দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু এ বার নিম্নচাপ অক্ষরেখা ও ঘূর্ণাবর্ত ঠায় বসেছিল দক্ষিণবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকার উপরে। এর ফলেই পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে। এবং তা ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করেছে। আকাশ মেঘলা থাকাতেই দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি। এবং তাতেই মেজাজ বদল মে মাসের।“আবহাওয়া দফতরের গত ২০ বছরের তথ্য অনুযায়ী, এ বারের মে মাসটাই শীতলতম।”মন্তব্য এক আবহবিদের। |
|
|
|
|
|