পোপের সঙ্গে বদলাচ্ছে ভ্যাটিকানের হাওয়া
দু’মাস হল ভ্যাটিকানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। আর এই ক’দিনে ভ্যাটিকানের চরিত্রটাও যেন বদলাতে শুরু করেছে। ঠিক খানিকটা তাঁর চরিত্রের মতোই।
তিনি ভ্যাটিকানের নতুন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের সংজ্ঞা যে বদলাচ্ছে, তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছিল তিনি আসার পরপরই। ৭৬ বছরের এই আর্জেন্তিনীয় তাঁর নানাবিধ ব্যতিক্রমী কাজকর্ম আর মন্তব্যের জন্য এই দু’মাসেই বেশ কয়েক বার খবরের শিরোনামে এসেছেন।
কখনও ‘হোলি থার্সডেতে’ জেলবন্দি মহিলাদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন তিনি। কখনও বা বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলে গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, “কিছু মানুষের টাকার আরাধনা, আর লোভের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতির এখন টালমাটাল পরিস্থিতি।” অতি সম্প্রতি তিনি বিতর্ক বাধিয়েছেন নাস্তিকরাও স্বর্গে যেতে পারেন বলে।
পোপ ফ্রান্সিস যা-ই বলুন আর করুন। সেগুলির কিন্তু সদর্থক মানেই খুঁজে পাচ্ছে ভ্যাটিকান। “এটা ভীষণ ভাবে সদর্থক একটা ব্যাপার। বাতাসে একটা বদল এসেছে। যেন অনেক শক্তি একসঙ্গে হয়েছে”, বললেন ভ্যাটিকানেরই এক আধিকারিক। অবশ্যই নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে।
সাপ্তাহিক দর্শন। বুধবার সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: এ এফ পি
তাঁর পূর্বসূরি ষোড়শ বেনেডিক্টের আমলে পোপতন্ত্র নিয়ে অনেক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই ভ্যাটিকানেরই ক্ষমতা-বিন্যাস নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুব একটা হেলদোল নেই পোপ ফ্রান্সিসের। শুধু মাত্র আট জন কার্ডিনালকে বহিরাগত পরিদর্শকের কাজে নিযুক্ত করেছেন। বরং গরিবদের দিকেই বেশি করে মন দিতে চান তিনি। তাঁর নিজের জীবন ধারণেও তাই সাধারণতার ছাপ। পোপের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে ভ্যাটিকানের মধ্যেই কাসা সান্টা মারিয়ায় থাকেন তিনি। রাতের খাবারটাও খান সাধারণ যাজক আর দর্শনার্থীদের সঙ্গে। পোপ হওয়ার পরে বারবারই তিনি টেনে এনেছেন ইউরোপের আর্থিক মন্দা আর দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলির লোকেদের দুর্দশার প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, “মানুষ না খেয়ে মরলে আর তো কিছুই করার থাকে না। আমাদের বর্তমান সঙ্কট এটাই।” কিছু দিন আগেই জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে একটি মাস-এ আর্থিক মন্দার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন পোপ। “আমরা নতুন আদর্শ তৈরি করেছি। হৃদয়হীন ভাবে অর্থের আরাধনা আর অর্থনীতির একনায়কতন্ত্রের জন্য আসলে মনুষ্যত্বের আসল উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে গিয়েছে” বলেছেন পোপ।
আর ইতিমধ্যেই ষোড়শ বেনেডিক্টের সঙ্গে তুলনা টানা শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর। তবে ভ্যাটিকান সংবাদপত্রের প্রধান জিওভান্নি মারিয়া ভিয়ান অবশ্য বললেন, “দু’জনের মধ্যে পার্থক্য তো আছে বটেই। তবে সেটা বিষয়গত নয়। স্টাইলের।” ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ফেডেরিকো ল্যামবোর্দিও বললেন, “ফ্রান্সিসের বক্তৃতা হল সোজাসাপ্টা আর স্পষ্ট। আর তা কখনওই খুব দীর্ঘ নয়।” ষোড়শ বেনিডিক্ট যেমন তাঁর বক্তৃতা দিতেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। সেখানে তাঁর নিজের মতামত প্রায় থাকতই না। আর ফ্রান্সিস ঠিক যেন তার উল্টো। তাঁর বক্তৃতায় মাঝেমাঝেই উঠে আসে বিতর্কিত বিষয়। নিজের জীবন আর পরিবারের উল্লেখও থাকে সেখানে। গত সপ্তাহান্তেই যেমন তিনি জানিয়েছেন, ছোটবেলায় প্রার্থনার সময় কেমন করে ঘুমে ঢুলতেন তিনি। আর কী ভাবেই বা তাঁর মা আর ঠাকুরমা তাঁকে ধর্মের রাস্তায় হাঁটতে অনুপ্রাণিত করেছেন।
নতুন পোপের এ হেন আচার-আচরণের সঙ্গে ভ্যাটিকানের আধিকারিকেরাও যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না। সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে তাঁকে দেখতে হাজার হাজার লোকের ভিড় উপচে পড়ে এখন। আর সেই ভিড়ের মধ্যে নিজেও মাঝেমধ্যে চলে যান পোপ। ব্যাস। ভ্যাটিকান আধিকারিকদের তখন ব্যস্ততার অন্ত থাকে না। ৫৯ বছরের আত্তিলিও করতিগা দক্ষিণ ইতালির কাম্পানিয়া থেকে প্রতি বুধবার পোপের দর্শনে আসেন। আর তার জন্য রাত একটায় ঘুম থেকে উঠতেও তাঁর আপত্তি নেই। “উনি যবে থেকে পোপ হয়েছেন, নিজেকে এক নতুন ক্যাথলিক মনে হয়। আমি আসি কারণ আমার মনে হয়, উনি সাধারণ মানুষের খুব কাছের। ওনার কথা সকলের মন ছোঁয়”, বলেছেন আত্তিলিও। নতুন পোপের জাদু বোধহয় এখানেই।
আর ফ্রান্সিসের দৌলতে ভ্যাটিকানের হকারদেরও এখন কপাল খুলেছে। “বেনেডিক্টের সময় কিছু বেচা মুশকিল ছিল। এই পোপকে দেখতে এত লোক আসেন। সকলেই কিছু না কিছু কিনে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি যান।” ৬০ বছরের মার্কো মেসেনির চোখ চকচক করে ওঠে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.