দৃষ্টির বাধা পেরিয়ে চলেছে পায়েল
ড়তে অসুবিধে হত ছেলেবেলা থেকেই। নার্সারিতে পড়ার সময় ব্ল্যাকবোর্ডের একেবারে সামনে না গেলে প্রায় কিছুই দেখতে পেত না সে। তবুও কখনও কানে শুনে, কখনও আতস কাঁচ দিয়ে পড়ার চেষ্টাটা চালিয়ে গিয়েছে সে। আর সেই চেষ্টার জোরেই সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে ৯১.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে পানাগড় বাজারের বাসিন্দা পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদম ছোটবেলায় আর পাঁচটা শিশুর মতোই ছিল পায়েল। তফাত একটাই, টিভি বা স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ড দেখত একেবারে সামনে গিয়ে। আর আচমকা চোখের সামনে কিছু চলে এলে টচ করে বুঝতে পারত না। পায়েলের বাবা, পেশায় দুর্গাপুর আদালতের আইনজীবী গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তখনই মেয়ের চোখের চিকিৎসা শুরু হলেও চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার পরে জানা যায়, পায়েলের রেটিনার দু’টি নার্ভ শুকিয়ে গিয়েছে। ততদিনে দুর্গাপুরের সেন্ট মাইকেল স্কুলে ভর্তিও হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু যাতায়াতেও সমস্যা হওয়ায় ,সপ্তম শ্রেণিতে এসে রাজবাঁধের মনীষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু চোখের সমস্যা বাড়তেই থাকে। বইয়ের হরফ প্রায় কিছুই দেখতে পেত না সে। মা মালাদেবী পড়ে পড়ে শোনাতেন, আর শুনে শুনেই মনে রাখত পায়েল। মাঝে মাঝে আতস কাঁচ দিয়ে পড়ারও চেষ্টা করত। কিন্তু সমস্যা হত বানান নিয়ে। চোখে না দেখায় কঠিন শব্দের বানান লিখতে পারত না সে। সহপাঠীদের এগিয়ে যেতে দেখে হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে। তখনই অনেকটা তারে জমিন পর-এর নিকুম্ভ স্যারের মতো অগিয়ে আসেন ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক কন্টিয়াকুমার চন্দ। পায়েল বলে, “স্যারের সাহায্যে আমার মনোযোগ বাড়ল। আমিও নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।”

পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
২০১০ সালে সরকারি মেডিক্যাল বোর্ডের পরীক্ষায় জানা গেল, পায়েলের দৃষ্টিশক্তি ৭৫ শতাংশ কম। দশম শ্রেণির পরীক্ষার দু’মাস আগে তার দিদি, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দোয়েল চেন্নাই থেকে বোনকে একটি বিশেষ মাউস এনে দিলেন। বইয়ের হরফের উপর মাউস ধরলে তা আকৃতিতে সামান্য বড় হয়ে ফুটে উঠত এলসিডি মনিটরে। মালাদেবী বলেন, “পুরো লাইন একেবারে দেখা যেত না। তবু তাতেই আমার সাহায্য ছাড়া পড়া শুরু করল মেয়ে। কমল বানান ভুলও।” দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯১.২ শতাংশ নম্বর পেল পায়েল। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল দুর্গাপুরের হেমশিলা মডেল স্কুলে। দ্বাদশ শ্রেণিতে নম্বর আরও ভাল হল। বোর্ড একজন রিডার নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। তিনি প্রশ্ন পড়ে দিতেন, আর উত্তর লিখত পায়েল। স্কুলের অধ্যক্ষ সৌমেন চক্রবর্তী বলেন, “পায়েল আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।”
স্কুলে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে পায়েল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়েই পড়াশোনা করতে চায় সে। স্কুলের অর্থনীতির শিক্ষক দেবদাস কর্মকার বলেন, “এমনি কোনও অসুবিধা নেই। তবে গ্রাফের কাজ করার সময় একটু সমস্যা হয় ওর। তবে ওর মনের জোর অসাধারণ। আশা করি উচ্চশিক্ষায় আরও সাফল্য পাবে।” পায়েলের বাবা গোপালবাবুও আশা রাখেন যে, ভবিষ্যতে নিশ্চয় এমন পদ্ধতি আবিস্কৃত হবে যাতে পায়েলের মতো ছেলেমেয়েরা সহজে লেখাপড়া করতে পারবে।
তবে অন্যদের থেকে পড়াশোনায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয় বলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও ভারতনাট্যম শেখা ছাড়তে হয়েছিল পায়েলকে। পায়েল বলে, “যদি বাবার আশা পূরণ হয় তাহলে আমি আবারও গান ও নাচ শুরু করতে পারব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.