সব অন্ধকার পিছনে ফেলে মাধ্যমিকে সেরার মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁর স্কুলের ছাত্র। তৃণমূল নেতা খুনে অভিযুক্ত পূর্বস্থলীর সেই শিক্ষক নেতাকেই বর্ধমান জেলা পরিষদে প্রার্থী করতে চাইছে সিপিএম। গত দেড় বছর ধরে জেলে রয়েছেন পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা সিপিএমের পূর্বস্থলী লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সাহা। ইতিমধ্যে পাঁচ বার হাইকোর্ট তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করেছে। জেলে বসেই তিনি জেনেছেন, তাঁর স্কুলের সৌরাশিস বিশ্বাস মাধ্যমিকে যুগ্ম প্রথম হয়েছে। মঙ্গলবার নবদ্বীপ আদালতে তোলা হলে ফের তাঁর জামিন নাকচ হয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময়ে তিনি বলে যান, “স্কুল ঘিরে যে স্বপ্ন বুনে এসেছি, এত দিনে তা সফল হল।” ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি রাতে নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে গুলিতে খুন হন তৃণমূলের পূর্বস্থলী অঞ্চল সহ-সভাপতি সজল ঘোষ। সেই রাতেই নবদ্বীপের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় আদতে বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা প্রদীপবাবুকে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। স্কুলের সাফল্যের জেরে তাঁকে ঘিরে যে ফের আবেগের স্রোত বইতে শুরু করেছে, সিপিএম নেতারাও তা জানেন।
রাতে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “ক’দিন আগে পারুলিয়া স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ছ’টি আসনেই আমরা জিতেছি। প্রদীপ দাঁড়ালে জিতবে জেনেই ওকে আমরা দাঁড় করানোর ব্যাপারে চিন্তা করছি।”
প্রদীপবাবুর বেশ কিছু সহকর্মী এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁর স্কুলেরই ছাত্র প্রথম হয়েছে, অথচ তিনিই স্কুলে নেই। কেমন লাগছে? আদালত চত্বরে প্রদীপবাবুকে খানিকটা আবেগ বিহ্বল মনে হয়। তিনি বলেন, “শারীরিক ভাবে হয়তো নেই, কিন্তু স্কুলের সঙ্গে সব সময় আছি। সৌরাশিস, সৌরভ, পূজারা আমার সন্তানের মতো। শুধু কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে, ওদের একটু ছুঁয়ে দেখতে পারছি না আমি।” সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোন পাওয়ার পরে মহাকরণে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছে সৌরাশিস। এ দিন ‘প্রদীপ স্যারে’র কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে তার। সৌরাশিস বলে, “আমার ক্ষেত্রে স্যারের অবদান অতুলনীয়। স্যারকে প্রণাম করে তাঁর হাত থেকে এই মার্কশিটটা নিতে পারলে খুব ভাল লাগত। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাই।” কৃষ্ণনগরে রওনা হওয়ার আগে প্রদীপবাবু বলেন, “মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে রেখে দিলেও মানুষ আমায় ভোলেননি। পঞ্চায়েত ভোটে পূর্বস্থলী ২ ব্লকে জয় হবেই।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কটাক্ষ, “মিথ্যা মামলায় ওঁকে ফাঁসানো হয়নি। পুলিশ তদন্ত করে ওঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। এক জন খুনে অভিযুক্তকে যদি সিপিএম প্রার্থী করে, কী বার্তা যাবে তা ওরাই বুঝবে।” অমলবাবু পাল্টা বলেন, “সাঁইবাড়ি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল থেকে লড়েই বিনয় কোঙার জিতেছিলেন। মুন্নার মতো অপরাধী যদি জামিন পেতে পারে, একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েও প্রদীপ জামিন পেল না?”
প্রদীপবাবুর স্ত্রী শম্পাদেবী বলেন, “আমার মেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। ক’দিন বাদেই ফল বেরোবে। সেই দিনে ভীষণ ভাবে বাবাকে পাশে চাইছে ও।” |