|
|
|
|
আজ থেকে মনোনয়ন, প্রয়োজনে পুলিশি টহল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আজ, বুধবার থেকে শুরু হয়ে যাবে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব। বিরোধীদের আশঙ্কা, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের লোকেরা মনোনয়ন তোলার সময় থেকেই সন্ত্রাস চালাবে। যদিও প্রশাসনের দাবি, নির্বিঘ্ন মনোনয়ন পর্ব সারতে সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলগুলি অবশ্য প্রশাসনের আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কারণ, ব্লক ও মহকুমা অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়িতেই ফিরতে হবে প্রার্থীদের। রাস্তাঘাটে চলাফেরা, হাট-বাজারও করতে হবেযেখানে প্রশাসনিক নজরদারির সুযোগ থাকবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিভিন্ন নিয়মকানুন জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে তমলুকে যে সর্বদল বৈঠক হয়, সেখানে এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরলেন বাম নেতারা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের ডাকা ওই বৈঠকে সিপিএম নেতা শক্তিপদ বেরা শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন। সম্প্রতি কয়েকটি সমবায় ব্যাঙ্কের ভোটে বাম প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। বৈঠকে কংগ্রেস নেতা মৃণাল পালও অভিযোগ করেন, “ভগবানপুর, পটাশপুর, সুতাহাটা, খেজুরি ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে শাসকদলের লোকজন আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিচ্ছে।” বৈঠকে তৃণমূলের নেতারা উপস্থিত থাকলেও মুখ খোলেননি। তবে, ভোটপর্ব চলাকালীন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলেই উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করেছেন জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি ও পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন। |
|
তমলুকে জেলা প্রশাসনিক ভবনে সর্বদল বৈঠক।—নিজস্ব চিত্র। |
কাঁথিতে মহকুমাশাসক সুমিত গুপ্তের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকেও শাসক দলের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার কাঁথির মহকুমাশাসকের দফতরে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের মামুদ হোসেন, সিপিএমের চক্রধর মেইকাপ, শোয়েব মহম্মদ, কংগ্রেসের গঙ্গারাম মিশ্র, সিপিআইয়ের রাজকুমার চক্রবর্তী। বৈঠকে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, খেজুরি ১, ২, ভগবানপুর ২, কাঁথি ৩ ও দেশপ্রাণ ব্লকে তাদের লোকেদের হুমকি দিচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা। মামুদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “জনসমর্থন না থাকায় বিরোধীরা অলীক অভিযোগ করছেন।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার থেকে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়া শুরু। জমা দেওয়ার শেষ দিন ৫ জুন। ৭ জুনের মধ্যে তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ জুন। ওই দিনই প্রার্থীদের প্রতীকও দিয়ে দেওয়া হবে। ২ তারিখ ভোট। বুধবার থেকেই জেলায় নির্বাচনী পরিদর্শকদের পৌঁছে যাওয়ার কথা। প্রতিটি ব্লকের জন্য ১ জন করে পরিদর্শক। আর জেলার জন্য ১ জন। বিডিও অফিসে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে। আর জেলা পরিষদের মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে মহকুমা শাসকের অফিস থেকে। সংশ্লিষ্ট অফিস থেকেই দেওয়া হবে মনোনয়নের আবেদনপত্র ও সঙ্গে এফিডেভিটের বয়ান। মনোনয়ন পত্র জমা দিতে হলে কী কী নথি প্রয়োজন, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হবে। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ চারটি জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। যদিও কাউকেই চারটি আবেদনপত্র দেওয়া হবে না। কেউ একাধিক আবেদনপত্র চাইলে তাঁকে ২টি দেওয়া হবে। তার বেশি জায়গায় তিনি প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করলে সেই আবেদনপত্র জেরক্স করে তিনি মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। এমনকী মনোনয়নের বয়ান সাদা কাগজে হাতে লিখে জমা দিলেও মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত।
এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আসন সংখ্যা ৩৩৬২, পঞ্চায়েত সমিতির আসনের সংখ্যা ৬৬১, জেলা পরিষদে ৬০। মোট বুথের সংখ্যা ৩৯৭৭। এর মধ্যে উত্তেজনাপ্রবণ বুথের সংখ্যাই ৩১৫৮। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অনুযায়ী উত্তেজনাপ্রবণ বুথের সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ৪৭০১টি আসন রয়েছে। ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৮৪৬টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৭৯৮টি ও জেলা পরিষদে ৬৭টি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ব্লকে যতগুলি গ্রাম পঞ্চায়েত মনোনয়ন জমা নেওয়ার জন্য তত জন এপিআরও (অ্যাসিস্ট্যান্ট পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসার) দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জেলায় অতিরিক্ত আধিকারিক না পাওয়া গেলে কোনও ক্ষেত্রে একজনকেই একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিতে হবে। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রেও একই ভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলবে। |
|
ভোটের বাদ্যি। শালবনির বাগমারি থেকে জাড়া পর্যন্ত সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রে খবর, বিডিও এবং এসডিও অফিসে ত্রিস্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। যে জায়গায় মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে সেখানে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হবে, ব্লক অফিসের গেটের ভেতরে ও বাইরেও নিরাপত্তারক্ষী রাখা হবে। এ ছাড়াও বিডিও এবং এসডিও অফিসের সামনে পুলিশের টহলদারি গাড়ি থাকবে। রাস্তায় কোনও দলের কর্মীকে মনোনয়নে বাধা দেওয়ার খবর পেলেই টহলদারি গাড়ি পৌছে যাবে ঘটনাস্থলে। থানাতেও একটি গাড়ি তৈরি রাখা হবেকোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলেই যাতে দ্রুত সেখানে পৌঁছনো যায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্তের আশ্বাস, “নির্বিঘ্নে মনোনয়ন জমা নেওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এখনও বাইরে থেকে বাহিনী আসেনি। কবে আসবে, কত পরিমাণ আসবে তা নিয়ে নিশ্চিত নন পুলিশ কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে জেলার সামান্য পুলিশ দিয়ে আদৌ কী ভোট করা সম্ভব! এর সদুত্তর মেলেনি। |
|
|
|
|
|