লেদ মেশিনের কারখানা করবে বলে চারটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল কয়েক জন যুবক। দু’মাসের ভাড়ার টাকা অগ্রিমও দিয়েছিল তারা। সেই সব বাড়ির ভিতরে যে পুরোদমে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কাজ চলছে, ঘুণাক্ষরেও তা বুঝতে পারেননি এলাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার হাওড়ার বাঁকড়ায় খাঁ-পাড়ার জলার ধার এলাকার ওই চারটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ৯-এমএম পিস্তল, দু’বস্তা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ এবং প্রচুর কার্তুজ। পুলিশ জানায়, অস্ত্র তৈরির জন্য বসানো হয়েছিল আধুনিক লেদ মেশিনও। এই ঘটনায় অবশ্য কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ তল্লাশি চালানোর আগেই দুষ্কৃতীরা গা-ঢাকা দেয়।
কী ভাবে পাওয়া গেল ওই অস্ত্র কারখানার হদিস?
পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ মে দিল্লি পুলিশ শেখ রুস্তম নামে এক অস্ত্র পাচারকারীকে বেআইনি অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করে। তার সঙ্গেই ধরা পড়ে অন্য তিন জন। তাদের জেরা করে জানা যায়, তারা বাঁকড়ার খাঁ-পাড়া এলাকা থেকে অস্ত্র কিনেছে। পুলিশ অস্ত্র সরবরাহকারীর লিঙ্কম্যান হিসেবে মহম্মদ সরফরাজের নাম জানতে পারে। সরফরাজ বাঁকড়াতেই থাকে। দিল্লি পুলিশের একটি দল হাওড়ায় এসে ট্যাক্সি ভাড়া করে রুস্তমকে নিয়ে খাঁ-পাড়ায় হানা দেয়। খবর দেয় ডোমজুড় থানাতেও। |
বাঁকড়ার সেই অস্ত্র কারখানা।—নিজস্ব চিত্র |
ওই থানার কর্মীরাও দিল্লি পুলিশকে সাহায্য করতে বাঁকড়ায় আসেন। হাওড়া আমতা রোড থেকে কিছু দূরে খাঁ-পাড়ার নির্জন এলাকায় গড়ে উঠেছে ওই সব কারখানা। বাড়িগুলির দেওয়াল পাকা, চাল টালির। চার মাস ধরে ওই কারখানাগুলি চলছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই সব বাড়িতে যে অস্ত্র তৈরি হত, তা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। এলাকার বাইরে থেকে আসা কয়েক জন যুবক ওই সব কারখানা চালাত। দরজা-জানলা সব সময় বন্ধ রাখা হত। ওই সব কারখানার ধারেকাছে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া হত না বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান।
সাহিদা বিবি নামে এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তাঁর একটি ঘর ওই যুবকেরা মাসিক ১২ শো টাকায় ভাড়া নিয়েছিল। দু’মাসের ভাড়ার টাকা আগাম দিয়েছিল তারা। অন্য যে-সব বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেগুলির মালিকেরাও ভাড়ার টাকা অগ্রিম পেয়েছেন বলে জানান।
হাজি সাহেব নামে এলাকার এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত কয়েক জন যুবক। ওই বাড়িতেই সরফরাজ থাকত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের যে-দলটি বাঁকড়ায় আসে, সেই দলের অন্যতম প্রধান পবন সিংহ বলেন, “শেখ রুস্তমকে জেরা করেই এই কারখানার হদিস পাওয়া গিয়েছে। সরফরাজের খোঁজ চলছে। যে-দলটি এখানে অস্ত্র তৈরি করত, অন্য কোথাও তাদের ডেরা আছে কি না, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর চলছে।” |