নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মজুরি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা, বরাদ্দ টাকার একটা বড় অংশ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠল পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সচিব, একশো দিন কাজ প্রকল্পের সুপার ভাইজারদের বিরুদ্ধে। সিপিএম পরিচালিত ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা পঞ্চায়েত এলাকায় একটি পুকুর কাটাকে ঘিরে এমন অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় ভল্লা বলেন, “অভিযোগের বিষয় কিছু জানি না। তবে মহিদাপুরের কিছু বাসিন্দা তথ্য জানার আইনে ওই প্রকল্পের সমস্ত নথি চেয়ে আবেদন করেছেন মাত্র। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে ওই পঞ্চায়েতের মহিদাপুর গ্রামের ‘দেশমুখো’ পুকুর সংস্কারের জন্য একশো দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই পুকুর সংস্কারের কাজ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যা সন্ধ্যা মুদি, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সচিব লালমোহন বাগদি, সুপার ভাইজার নজরুল ইসলাম, বাবলু শেখ, আলাউদ্দিন শেখ, আহম্মদ শেখ-সহ ৮ সিপিএম নেতাকর্মী। কাজ করা শ্রমিকদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বাইরে থাকা ছেলেমেয়ে কিংবা নিয়ক আত্মীয়দের নাম মাস্টার রোলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
শ্রমিকদের মজুরির তালিকায় দেখা গিয়েছে, নজরুল শেখের ছেলে আসমত আলির নামে দু’দফায় টাকা তোলা হয়েছে। বরাদ্দ হয়েছে ১০৮০ টাকা। স্ত্রী নুরজাহান বিবির নামেও দু’দফায় ১২০০ টাকা, আর এক সুপার ভাইজার আলাউদ্দিন শেখের ছেলে সাধু জামাল শেখের নামে দু’দফায় ১২০০ টাকা ও মেয়ে রূপ সাহানার নামে ৮৪০ টাকা। আহম্মদ শেখের স্ত্রী নুরশোভা বিবির নামে দু’দফায় ১২০০ টাকা এবং ছেলে খিলন শেখের নামে ৮৪০ টাকা ও বাবলু বাগদির আত্মীয় মাধব বাগদির নামেও ৮৪০ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শ্রমিক মহম্মদ আনারুল শেখ, ইসরাইল শেখদের অভিযোগ, “এক বছর আগে থেকে আসমত আলি কর্মসূত্রে আরবে রয়েছেন। চেন্নাইয়ে কর্মরত সাধু জামাল শেখও। দু’বছর আগে সিউড়ির উধনপুরে বিয়ে হয়েছে রূপ সাহানার। বছর কয়েক আগেই রেশন ও ভোটার কার্ড স্থানান্তরিত করে মহম্মদবাজার এলাকার বাসিন্দা হয়েছেন মাধব বাগদি। বাকিরাও কেউ কাজ করেননি। অথচ তাঁদের নাম মাস্টার রোলে ঢুকিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।”
তাঁদের আরও অভিযোগ, শুধু নিকট আত্মীয় নয়, দলীয় নেতাকর্মীদের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সকলেই। সচিব ও পঞ্চায়েত সদস্যা বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে তৃণমূলের লোকেরা মিথ্যা অভিযোগ করেছে।” তাঁদের দাবি, “আসলে অভিযোগকারীরা কাজ না করেই মজুরি দাবি করেছিলেন। তাতে রাজি হইনি বলে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।” অন্য দিকে নজরুল ইসলামের দাবি, “আমার ছেলে আরবে থাকে। স্ত্রীও ওই প্রকল্পে কাজ করেননি। পড়শি দুঃস্থ দুই ব্যক্তি জবকার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁরাই আমার স্ত্রী ও ছেলের নামে কাজ করে বেতন নিয়েছেন।” আলাউদ্দিন শেখও দাবি করেছেন, “ছেলে বাইরে থাকলেও পুকুর সংস্কারের সময় বাড়িতেই ছিল। বিবাহিত মেয়েও আমার কাছেই থাকে। দু’জনেই কাজ করেছে।” সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও মলয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। অন্যের জবকার্ডে কাজ করা বেআইনি। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে তদন্ত করে দেখতে হবে।” |