পড়ার তাগিদে সফল টোটোপাড়ার ১১
মাধ্যমিকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এল দেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি টোটো সম্প্রদায়ের মধ্যে। এ বার টোটো সম্প্রদায়ের ১১ জন পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পাশ করেছে। সকলেই টোটোপাড়ার ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিশা ঘোষালের দাবি, এক সঙ্গে এত জন টোটো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়ে এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। তাঁর কথায়, “টোটো সম্প্রদায়ের ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি তাগিদও অনেকটা বেড়েছে। যারা পাশ করতে পারেনি তারা যাতে আগামীবার পরীক্ষা দিয়ে ভাল ভাবে উত্তীর্ণ হয় সে দিকেও আমরা নজর রাখব।” টোটোপাড়ার মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীদের সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসও। তিনি বলেন, “গত বার থেকে আমরা টোটোপাড়ায় শিক্ষা সংক্রান্ত কিছু কাজ করেছি। টোটো ছেলেমেয়েরা যাতে নির্বিঘ্নে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারে সে বিষয়ে সরকার বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখছে।”
পরীক্ষা চলাকালীন টোটো পড়ুয়ারা। —ফাইল চিত্র।
ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে এ বার মোট ১৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ১১ জন টোটো পড়ুয়া এ বার উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হারের সংখ্যার দিক থেকে ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও নম্বরের দিক থেকে অরুণা টোটো ছেলেদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। অরুণার প্রাপ্ত নম্বর ২৬৬। ছেলেদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে সনে টোটো। তার প্রাপ্য নম্বর ২৫২।
১৯৭৯ সালে টোটোদের মধ্যে প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেন চিত্তরঞ্জন টোটো। এখনও পর্যন্ত ৪৬ জন টোটো পড়ুয়া মাধ্যমিক পাশ করেছেন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা খানিক পিছিয়ে থাকলেও ২০০৩ সালে প্রথম টোটো মেয়ে সূচনা মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে। গত বার পর্যন্ত ১৩ জন টোটো মেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। সোমবার ফল প্রকাশের পর সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭ জন। টোটোদের এই সাফল্যে খুশি জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকি মহাপাত্র। তাঁর কথায়, “এক সঙ্গে এতজন টোটো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা মাধ্যমিকে পাশ করায় তাদের জন্য আমার অভিনন্দন রইল। টোটোপাড়ার সব বাড়ির ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যায়, সে দিকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লকের ভুটান পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতি গোষ্ঠী টোটোদের গ্রাম। ৩১৯টি টোটো পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ১৪০২ মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে খানাখন্দে ভরা রাস্তা ও তিতি, বাঙড়ি, হাউড়ি নদী পেরিয়ে টোটোপাড়ার বাসিন্দারা ব্লক শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বর্ষাকালে নদী ফুলে ফেঁপে উঠলে কয়েক দিনের জন্য সেই যোগাযোগটুকুও বন্ধ হয়ে যায়। সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে অধিকাংশ টোটো পরিবার দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সংসার চালান। এক সময় টোটোদের মধ্যে পড়াশোনার প্রচলন ছিল না। পড়াশোনার আগ্রহ বাড়াতে প্রাথমিক স্কুল ও ১৯৯৫ সালে ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল হাই স্কুল তৈরি হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে নানা চেষ্টা করে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ানোর কাজ শুরু হয়।
অর্থাভাবে বহু ছাত্রছাত্রী মাঝপথে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়। মাধ্যমিক পাশ করার পরে মাদারিহাট না হলে আলিপুরদুয়ার গিয়ে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে তাদের। তবে তার মধ্যেও তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইছে। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে চাকরি পেয়েছে মেয়েদের মধ্যে এক মাত্র স্নাতক রীতা টোটো। তাই এ বারে মাধ্যমিকে সফল হওয়া সুরজ টোটো, জিনা টোটো, মদন টোটো আর ভাগি টোটোদের আশা তাদের পড়াশুনোর জন্য এগিয়ে আসবে সরকার। অভাব হার মানাতে পারেনি জেদকে। সামান্য জমি চাষ করে কোনমতে সংসার চালান গুজা টোটো। তাঁর মেয়ে ভাগি মাধ্যমিক পাশ করেছে। ভাগির কথায়, “আজ খুব আনন্দের দিন। মাদারিহাট বা আলিপুরদুয়ারে পড়াশোনা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.