মাঠ দাপিয়েও মাধ্যমিকের চুড়োয় সৌরাশিস-রূপায়ণ
খেলতে-খেলতে ফার্স্ট।
পূর্বস্থলীর ‘বিশ্বাসভিলা’র ছটফটে ছোট ছেলে সৌরাশিস সম্পর্কে আর কী-ই বা বলা যায়? ঘরের দেওয়ালে মেসি, সচিন, বেয়ার্ন মিউনিখ। ঘরের বাইরে হাঁ করে থাকা খেলুড়ের দল।
সোমবার সকালে মাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই গোটা সংবাদমাধ্যম যখন বর্ধমানের পূর্বস্থলী স্টেশনের কাছে ‘বিশ্বাসভিলা’য় ভেঙে পড়েছে, পাড়াপড়শি অনেকের মুখেই তখন অবিশ্বাসের ছাপ।
রোজ বিকেলে পারুলিয়ার অরুণ-তরুণ সঙ্ঘের মাঠে কে না ঋজুকে বল পেটাতে দেখেছে? ক্লাবের বিশ্বস্ত মিডফিল্ডার হিসেবে কম বার এ-পাড়া ও-পাড়া খেলে বেড়িয়েছে সে? এই তো পরীক্ষার আগেই টিভিতে ক্রিকেট চলতে দেখে মা ঘরে ঢুকে দেখেন, ছেলের এক চোখ খেলায় আর এক চোখ অঙ্কে। সেই ঋজু, পূর্বস্থলীর পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের খাতায় যার ভাল নাম সৌরাশিস বিশ্বাস, একেবারে মাধ্যমিকে ফার্স্ট?
বন্ধুদের সঙ্গে রূপায়ণ কুণ্ডু। ছবি: মোহন দাস।
বিকেলে মহাকরণে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌরাশিসের হাতে ফুলের স্তবক, বই আর নিজের আঁকা ছবি তুলে দিচ্ছেন, তখনও তার চোখ চঞ্চল। মুখে দুষ্টু হাসি। যা দেখলে যে কেউ এক নজরে বলে দেবে, আর যা-ই হোক, এ ছেলে খালি পড়ার বই আর নোটের দিস্তায় মুখ গুঁজে থাকা হুঁকোমুখো হ্যাংলা নয়।
যেমন নয় আরামবাগের রূপায়ণ কুণ্ডুও। মাধ্যমিকে ৬৮২ আপাতত তাকে আর সৌরাশিসকে একই চুড়োয় পাশাপাশি বসিয়ে দিয়েছে। অথচ তার মা বলছেন, “মন দিয়ে দু’ঘণ্টাও পড়ত না। কখনও খেলতে চলে যাচ্ছে, কখনও গাছে ফল পাড়ছে। কখনও গল্পের বই পড়ছে!”
আরামবাগ ডিহিবাগনান কে বি রায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষক সুনীলকৃষ্ণ রায় বলেন, “অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেটা ভীষণ দুষ্টু ছিল। তার পর শান্ত হয়ে যায়।” প্রতিবেশী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় জানান, রূপায়ণ নিয়ম করে মাঠে ফুটবল পেটায়ই, গাছে উঠে ফল পাড়তেও ওস্তাদ। মোহনবাগান-আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থক। খেলা থাকলে পাগল। তার মা, গৌরহাটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী প্রণতি কুণ্ডু বলেই ফেলেন, “ছেলে ভাল ফল করবে, জানতাম। তবে প্রথম হবে ভাবতেই পারিনি!”
রূপায়ণদের বাড়িতে ভাল রেজাল্ট করাটা নতুন নয়। ২০০৬ সালে মাধ্যমিকে হুগলি জেলায় প্রথম হয়েছিল তার দিদি অলিভিয়া। ফল জেনে রাজারহাটে অফিসে যাওয়া সেই দিদিকেই প্রথম ফোনটা করে রূপায়ণ। বাবা, স্কুলেরই শারীরশিক্ষার শিক্ষক স্বপনকুমার কুণ্ডু অবশ্য শিক্ষকদের কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, “ওঁরা ভাল না পড়ালে এই সাফল্য সম্ভব ছিল না।” প্রধান শিক্ষক নবকুমার মণ্ডল সস্নেহে বলেন, “ওর পরিশ্রম করার ক্ষমতাই আলাদা। তাই সফল হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌরাশিস বিশ্বাস। ছবি: সুদীপ আচার্যের ছবি।
ঘটনাচক্রে, রূপায়ণের সঙ্গে সৌরাশিসের মিল অনেক দিক দিয়েই। সৌরাশিসেরও এক দিদি, তিনি এখন দুর্গাপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। তার বাবা নিরঞ্জন বিশ্বাস আর মা মণিকা বিশ্বাস তাদের স্কুলেই পড়ান। বছর দেড়েক আগে এক তৃণমূল নেতাকে খুনের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক তথা সিপিএমের পূর্বস্থলী লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সাহা গ্রেফতার হওয়ায় নিরঞ্জনবাবুই স্কুলের ভার সামলাচ্ছেন। এ দিন মহাকরণে তিনি জানান, ফল বেরনোর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে অভিনন্দন জানান। হাসিমুখে সৌরাশিস বলে, “মুখ্যমন্ত্রী আশীর্বাদ করে বলেন, উচ্চশিক্ষায় অসুবিধা হলে সব রকম সাহায্য করবেন। আমি খুব খুশি।”
ইংরেজি ১০০, ইতিহাস ১০২, ভূগোল ১০৪... ফার্স্টবয়ের পাওয়া অবিশ্বাস্য সব নম্বর নয়। শক্ত শক্ত পরীক্ষার দিনে ট্যাবলেটের শাসন না মানা সৌরাশিসের জ্বরের আঁচ।
মাধ্যমিক তো নয়, যেন ছেলেখেলা!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.