|
|
|
|
|
সচিন পাজি, তোমার কথামতো
আমি কিন্তু লড়াই ছাড়ছি না
চেনা নাইট অধিনায়কের অচেনা জগৎ আনন্দবাজারে
গৌতম গম্ভীর |
|
আমার একটা খুব পছন্দের অবসর কাটানো হল ইউ টিউবে ক্রিকেটের নানা থিম নিয়ে তৈরি ভিডিও দেখা। কখনও স্টিভ ওয়ের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা ইনিংস, কখনও মার্ক ওয়ের চোখ জোড়ানো ব্যাটিং, কখনও আবার অ্যালান ডোনাল্ডের আগুন ঝরানো কোনও স্পেল। এই করতে করতেই সে দিন রিকি পন্টিংয়ের বিদায়ী সাংবাদিক বৈঠকের ভিডিওটা পেয়ে গেলাম। আমার মতে ওটা সকলের দেখা উচিত। আপনাদেরও বলব, প্লিজ দেখুন। সতেরো মিনিটের ভিডিওয় শুরু থেকে শেষ— মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকবেন!
মেয়েকে কোলে নিয়ে পন্টিং একটার পর একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন নিজের চিরাচরিত তাসমানিয়ান স্টাইলে। কথার ফুলঝুরি ফুটিয়ে। মাথার ব্যাগি গ্রিন টুপিটা বহু ব্যবহারে সামান্য রংচটা, জীর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও সগর্বে শোভা পাচ্ছে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের মাথায়। আর টুপির তলা থেকে বেরিয়ে থাকা চোখ দু’টো পিট পিট করছে প্রতিটা উত্তরের সঙ্গে। দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম যে, ক্রিকেট জীবনে দাঁড়ি টেনে দেওয়ার মতো ওই রকম অবেগের একটা মুহূর্তেও পন্টিং কী ভাবে একদিকে কোলে বসা মেয়েকে আর অন্য দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলো একসঙ্গে সমান দক্ষতায় সামলাচ্ছিল! পন্টিংয়ের ছোট্ট মেয়েটা বড্ড মিষ্টি। আবার চশমা পরে। সাংবাদিক বৈঠকের মাঝেই একটা সময় পন্টিং মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “কনসেনট্রেট”। ভীষণ কিউট মুহূর্ত। বাবা হিসাবে পন্টিং ঠিক কেমন, সেটা বোঝা যায়। ভিঢিওটা দেখবেন কিন্তু। আমার মনে হয় আপনাদের বেশ ভাল লাগবে।
|
|
‘‘মালিঙ্গার ওই ইয়র্কারটার কথাই বলছি যেটায় ও প্রথম ওভারে মাইকেল হাসিকে
এক রানে ফেরাল। আমার জন্য ওই ডেলিভারিটাই আইপিএল ফাইনালের আসল মুহূর্ত!’’ |
|
ইউ টিউবে আর একটা ক্লিপিং আমি মাঝেমধ্যেই চালিয়ে দেখি। ‘বেস্ট ইয়র্কারস’। শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আক্রম, অ্যালান ডোনাল্ড, ওয়াকার ইউনিস, ড্যারেন গফ আর লাসিথ মালিঙ্গার নানা ইয়র্কার নিয়ে তৈরি। মোট চার মিনিট ষোলো সেকেন্ডের ভিডিও। তবে আইপিএল ফাইনালের পর মনে হচ্ছে ভিডিওটায় কমকরে আরও কুড়ি সেকেন্ডের মতো ফুটেজ যোগ হবে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আমি মালিঙ্গার ওই ইয়র্কারটার কথাই বলছি যেটায় ও প্রথম ওভারে মাইকেল হাসিকে এক রানে ফেরাল। আমার জন্য ওই ডেলিভারিটাই আইপিএল ফাইনালের আসল মুহূর্ত! সাপের মতো স্টাম্পে গিয়ে ছোবল মারছে— এমন নাটকীয় ইয়র্কারের পর্যায়ভুক্ত নয়। কিন্তু ওটা ছিল একদম আদর্শ, সেকেলে কুইক বল। ধ্রুপদী সুইংয়ের সাহায্যে যেটাকে ফেলা হয়েছিল একদম নিখুঁত নিশানায়। ইউ টিউবের প্যাকেজে ওই ডেলিভারিটা অবশ্যই ঢোকা উচিত।
ফাইনালের আর একটা দিক নিয়ে বলতে চাই। সেটার কোনও আলাদা ক্যাটেগরি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে মানতেই হচ্ছে, এই আইপিএলে রোহিত শর্মার প্রভাব বিশাল হয়ে থাকল। নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটা অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে করল রোহিত। বিশেষ করে ও যে ভাবে নিজের বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছে, সেটা আমার দারুণ লেগেছে। এক জন অধিনায়কের আসল পরীক্ষাটা হয় মাঠে দাঁড়িয়ে। যখন বোর্ডে রান তুলে ফেলার পর সেই রানটা রক্ষা করতে নামতে হয় তাকে। সেই সময় একজন অধিনায়ককে ক্রমাগত ভেবে যেতে হয় মাঠে ঠিক কী কী করলে ম্যাচের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে। ডাগআউট-ই হোক বা ড্রেসিংরুম, টিম ব্যাট করার সময় পরিস্থিতিটা কিন্তু একদম অন্য থাকে। আশা করব এই আইপিএলটা রোহিতের কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠবে। এর পর থেকে নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করে ক্রিকেটার হিসাবে সম্মান আদায় করে নিতে পারবে ও।
সচিন পাজি-র আইপিএল থেকে অবসর ঘোষণা অবশ্য আমার কাছে একেবারে বিনা মেঘে বাজ পড়া! নিজের সিদ্ধান্ত শুনিয়ে আমাকে একেবারে চমকে দিয়েছে পাজি। কেকেআরের হয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে শেষ বার মুম্বই গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। দুই ফরম্যাটেই ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া সত্ত্বেও পাজি আমাকে মুষড়ে পড়তে মানা করেছিল। কাছে ডেকে নিয়ে বলেছিল, “গোতি, ছোড়না নেহি।” আমাকে বুঝিয়েছিল, “তুই কিন্তু কিছুতেই হাল ছাড়িস না। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যা, তা হলেই দেখবি আবার ফিরে আসতে পেরেছিস।”
পাজি, আমি হাল ছাড়ছি না, লড়াই ছাড়ছি না। চেষ্টা করে যাচ্ছি।
কিন্তু এটা ভেবে ভীষণ মন খারাপ লাগছে যে, পাজি-র ইউ টিউব ‘আইপিএল প্যাকেজ’টা নিঃশব্দে ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেল! |
|
|
|
|
|