|
|
|
|
|
বন্ধু থেকে এজেন্ট,
ফাঁদ পাতা কিন্তু সব জায়গায় দীপ দাশগুপ্ত |
|
শ্রীসন্ত-চান্ডিলাদের গ্রেফতার করা নিয়ে যে স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছিল, দিন দশেকের মধ্যে সেটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, ভাবলে বেশ ভয়ই করছে। ব্যাপারটা যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তাতে তো দেখছি যে কোনও কিছু নিয়েই বাজি ধরা যায়। একটা ক্রিকেট ম্যাচে কোন বোলার কত নম্বর ওভার বল করতে আসবে, টস জিতলে ক্যাপ্টেন ফিল্ডিং নেবে না ব্যাটিং, কে কোন ওভারে কত রান দেবে— সবই এখন টাকা কামানোর রাস্তা। একটা জিনিস পরিষ্কার ভাবে বলে রাখি। ম্যাচ গড়াপেটা করা কিন্তু কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল, ক্রিকেটারদের চারপাশে এত রকম খানাখন্দ তৈরি হয়ে গিয়েছে যে মাঝে মধ্যে নিজেদের অজান্তেই তারা এই পাঁকে পা দিয়ে ফেলে। আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার ফলে এই ব্যাপারগুলো আমার নজরে খুব ভাল ভাবে এসেছে।
খানাখন্দ মানে কী বলতে চাইছি? একে একে বোঝাচ্ছি:
এজেন্ট: বিপণনের যুগে এখন সব ক্রিকেটাররাই স্পনসর চায়। যার জন্য এখন এজেন্ট বা ম্যানেজারদের এত প্রতিপত্তি। খোঁজ নিলে দেখবেন, প্রচুর এজেন্ট ক্রিকেটারদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে বড় নাম-করা সংস্থার সত্যিকারের এজেন্ট বা ম্যানেজার যেমন আছে, তেমনই ছোট ছোট ম্যানেজাররা আছে। যারা কতটা সত্যি বলছে, বোঝা খুব কঠিন। সে হয়তো কোনও তরুণ ক্রিকেটারকে এসে বলল, আমার জানাশোনা একটা সংস্থা ক্রিকেটে লগ্নি করতে চায়। তুমি পাঁচ কোটি টাকা নাও, ওর কম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হয়ে যাও। একটা শু্যট করো, তোমাকে দু’লাখ টাকা দেব। পাঁচ-দশ বছর আগেও কিন্তু এ রকম ছিল না। এখন এই এজেন্টদের ব্যাপারটার মধ্যে এক্সক্লুজিভিটি বলে কিছু নেই। তবে এই ব্যাপারটা যে বোর্ডের নজরে পড়েছে, এটা ভাল লাগল। সে জন্যই তো এজেন্টদের নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড।
|
নরমে গরমে |
‘‘এই মুহূর্তে শ্রীনিবাসন সেই রণকৌশল মেনে চলছেন যেখানে বলা হয়, ‘দ্য বেস্ট ডিফেন্স ইজ পেড ডিফেন্স।’ আত্মরক্ষার সেরা উপায় হল টাকা ছড়ানো।’’
ললিত মোদী |
‘‘কোনও রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে আমাদের বোর্ডের তদন্তটা শেষ হতে দেওয়া উচিত। তিন সদস্যের তদন্ত কমিশনে আইপিএল গভর্নিং কমিটির দু’জন আছে বলে এত গেল গেল হচ্ছে কেন বুঝছি না।’’
সুনীল গাওস্কর |
‘‘‘মানি স্পিকস’— টাকা কথা বলে। তেমনি টাকা চুপ করিয়েও দিতে পারে! প্রাক্তন ক্রিকেটাররা কিছু না বলে নিজেদের বিবেকের সঙ্গে আপস করছে।’’
বিষেণ সিংহ বেদী |
|
সুখের সময় বন্ধু: ক্রিকেটারদের সঙ্গে কত লোকজনের আলাপ হয়। এদের মধ্যে প্রায় সবাই খুব বড়লোক। কারও নিজের রেস্তোরাঁ আছে, কারও সোনার দোকান। ধরুন এরা কেউ হঠাৎ করে আপনাকে খুব দামি ফোন বা ঘড়ি দিয়ে দিল। বা মডেলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তার পর গড়াপেটার দিকে ঠেলে দিল। এটা আটকানো কিন্তু বেশ কঠিন। লম্বা ট্যুরে থাকতে থাকতে ক্রিকেটাররা একা হয়ে পড়ে। তখন তার বন্ধুর দরকার হয়। কিন্তু এই ব্যাপারে ক্রিকেটারদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। এখানে বোর্ড বা বাইরের কেউ সাহায্য করতে পারবে না।
আমার হারানোর কিছু নেই: যারা একটু বয়স্ক ক্রিকেটার আর খুব একটা বিখ্যাত নয়, তাদের পক্ষে গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়ার একটা ভাবনা হয় যে, আমার কেরিয়ার তো শেষই হয়ে যাচ্ছে। তার পর এত টাকা কোথা থেকে পাব? ধরা পড়লেও বড়জোর নির্বাসিত হব। তাতে কী? এটা রুখতে খুব তাড়াতাড়ি গড়াপেটাকে ক্রিমিন্যাল অফেন্স করে দেওয়া উচিত। শ্রীসন্তের মতো জেল হওয়ার সম্ভাবানা থাকলে অন্তত ক্রিকেটারদের মনে একটা ভয় তৈরি হবে।
বেটিং আইন পাশ: অনেক দেশে বেটিং আইনবিরুদ্ধ নয়। ভারতে সেটা করলে ক্রিকেট-জুয়ার উপর সরকারি ভাবে নজর রাখা যাবে। যদি দেখা যায় একটা ম্যাচে অস্বাভাবিক বেটিং হচ্ছে, তা হলে অনেকটা সচেতন হওয়া যাবে। এতে গড়াপেটা বন্ধ না হলেও অন্তত ব্যাপারটা রেগুলেট করা যাবে।
বন্ধু যখন শত্রু: শ্রীসন্ত আর জিজু— দু’জনকে সব সময় একসঙ্গে দেখেছি। এখানে প্রশ্ন হল, এত কাছের কোনও মানুষ যদি আপনাকে ভুল রাস্তার দিকে ঠেলে দেয়, সেটা কী ভাবে আটকাবেন? এখানেও কিন্তু ক্রিকেটারদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। আমি যেমন কোনও টুর্নামেন্ট চলার সময় খুব কাছের বন্ধুর সঙ্গেও বেশি কথা বলি না। কী জানি, গল্প করতে করতে কী বলে ফেলব আর সেটা নিয়েই বাজি ধরতে বসবে জুয়াড়িরা! |
|
|
|
|
|